জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ০১ জানুয়ারি প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। যেখানে নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ জন।
রোববার (২৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর আগারগাঁও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অডিটোরিয়ামে "বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩" ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মমহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সভাপত্বিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের মমহাপরিচালক সাহান আরা বানু।
পরিসংখ্যান সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সর্বশেষ চূড়ান্ত জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। ফলে দেশে নতুন করে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৯ জন।
আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ সালের ভিত্তিতে ০১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৩.৫২ মিলিয়ন। যেখানে নারী ৮৮.৩৭ মিলিয়ন এবং পুরুষ ৮৫.১৫ মিলিয়ন।
পাশাপাশি জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে ০১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭১.৫৯ মিলিয়ন। যেখানে নারী ৮৭.৩৯ মিলিয়ন এবং পুরুষ ৮৪.২০ মিলিয়ন।
এদিকে গড় আয়ু কমলেও জরিপের কর্মকর্তারা বলছেন ২০২৩ সালে জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল পরিসংখ্যানিকভাবে অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২২ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২.৪।
যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭২.৩ বছর। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার (RNI) ১.৩৩% যা ২০২২ সালে ছিল ১.৪০%। লিঙ্গ অনুপাত কিছুটা নিম্নমুখী যা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৯৬.৩% এবং নির্ভরশীলতার অনুপাত ৫৩.৭%। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১,১৭১ জন। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ১৯.৪, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯.৮।
স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের হার ২০২২ সালের (৫৮.৬%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৪৯.৩ শতাংশ এবং অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে প্রসবের হার ২০২২ সালের (৪১.৪%) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৫০.৭ শতাংশ। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃত্যুহার ৬.১, যা ২০২২ সালে ছিল ৫.৮। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৩ এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্ম শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩ জন।
মৃত্যুর শীর্ষ দশ কারণের ১ম কারণ-হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর হার ১.০২% এবং ২য় কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হার ০.৬৪%। পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স ২৪.২ বছর এবং নারীদের ১৮.৪ বছর। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পল্লিতে আগমনের হার ২০.৪ এবং শহরে আগমনের হার ৪৩.৪। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অভিগমন প্রতি হাজারে ৬.৬১ জন থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮.৭৮ জন।
আন্তর্জাতিক আগমন বহিরাগমন প্রতি হাজারে ২.৯৭ থেকে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ২.৩৭ জন। ২০২৩ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালের (৬৩.৩%) তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬২.১ শতাংশা জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের (১৬.৬২%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ১৫.৫৭ শতাংশ হয়েছে। খানার আকার ২০২২ সালের ন্যায় ২০২৩ সালেও অপরিবর্তিত রয়েছে যা ৪.২ জন।
তবে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে নারী খানাপ্রধানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এটি ছিল ১৭.৪%, যা ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮.৯%। অপরদিকে, পুরুষ খানাপ্রধান ২০২২ সালে ছিল ৮২.৬%, ২০২৩-এ হার হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৮১.১%।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৩ শতাংশে। সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৭৭.৯ শতাংশ এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৪.৪) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.৬ শতাংশ।
এছাড়া, শিক্ষা, কর্মে কিংবা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণের সংখ্যা ২০২২ সালের (৪০.৬৭%) তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০২৩ সালে ৩৯.৮৮ শতাংশ হয়েছে। ৫+ বয়সী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৫৯.৯ শতাংশ।
তবে, ১৫+ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৩.৮) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪.২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৫+ বছর বয়সীদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হার ৫০.১%।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, পূর্বের চেয়ে মাতৃমৃত্যু হার লক্ষণীয়ভাবে কমে আসা এবং দেশের সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার যে জনকল্যাণে কাজ করছে তা দুটি সূচক দেখে সহজেই অনুমান করা যায়।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট পরিসংখ্যানের বিকল্প নেই। সীমিত জনবল এবং সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বিবিএস তার কাজের মধ্যে প্রতিনিয়ত দক্ষতার প্রমাণ রেখে চলেছে।
জাতীয় উন্নয়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনা যেমন-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রূপকল্প-২০৪১, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ইত্যাদি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মূল রসদ নির্ভরযোগ্য তথ্য ও পরিসংখ্যান প্রস্তুত করে দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করে চলেছে বিবিএস। সঠিক পরিসংখ্যান প্রস্তুতে তিনি আগামীতে বিবিএস-এর প্রতি সরকারের সকল প্রকার সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে যথাসময়ে পরিসংখ্যান প্রস্তুত, প্রকাশ ও সংরক্ষণে বিভাগ এবং এর আওতাধীন সংস্থা বিবিএস-এর কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে থাকেন। আজকের প্রতিবেদন প্রকাশনা তারই প্রমাণ।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কিছুটা হ্রাস পেয়ে হয়েছে, যা সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থার প্রতিফলন।