চিকিৎসক আফরোজা আক্তার লাকি জন্ম ও বেড়ে উঠা কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভূঁইয়া পরিবারে। দুই ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড় লাকি। কুমিল্লা থেকে স্কুল এবং কলেজ পেরিয়ে ঢাকায় এসে ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজের ভর্তি হয়ে পাশ করে ডেন্টাল সার্জন হন। বাবা পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, অসুস্থতার কারণে রিটায়ারমেন্ট নেয়ার ফলে পুরো সংসারের দায়িত্ব পড়ে তার উপরে। ছোট ভাই পড়ে ইউনিভার্সিটিতে, ছোট বোন কলেজে, তার ছোট ভাই স্কুলে পড়ে, মা গৃহিণী।
পরবর্তীতে তারা যথাক্রমে ছোট ভাই অ্যাডভোকেট, ছোট বোন সরকারি কর্মকর্তা, সবচেয়ে ছোট ভাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। নতুন ডাক্তার কোথাও চাকরি নেই, সিনিয়র ডাক্তারদের চেম্বারে জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে কাজ করে খুব অল্প বেতন পেতেন। ধীরে ধীরে কঠোর পরিশ্রম করে নিজই তৈরি করেন লাকি ডেন্টাল ক্লিনিক।
মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য অল্পমূল্যে সেবা দিয়ে শুরু হয় তার লাকি ডেন্টাল ক্লিনিক। এর মাঝে তার চেম্বারে চা বানানোর ছেলেটিকে কলেজ পর্যন্ত পড়িয়েছেন। বিবর্তন মেডিকেল ম্যাটস এ প্রিন্সিপাল থাকা অবস্থায় সাতজন ছাত্র-ছাত্রীকে নিজের অর্থে স্কলারশিপ দিয়ে মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট তৈরি করেছেন। তারা এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
রোড টু ডেভেলপমেন্ট নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন, যেখান থেকে বিভিন্ন জেলা ও প্রায় একশত উপজেলাতে বিনামূল্যে মেডিকেল ও ডেন্টাল ক্যাম্প করেছেন। সেখানে মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান, স্বাস্থ্য সেবা ও হেলথ অ্যাওয়ারনেস এর সম্বন্ধে মানুষকে সচেতনতা প্রদান করেন।
মার্কস মেডিকেল কলেজে ডেন্টাল বিভাগে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ উইমেনস ফেডারেশন কলেজের গভর্নিং বডির মেম্বার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। একইসঙ্গে মিলিটারি ডেন্টাল সেন্টারে ডিপ্লোমা ইন অর্থডনটিক্স ডিগ্রী করছেন। কোভিডের সময় নিরবিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা প্রদান করে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে নিজে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন।
তার স্বামী জাহেদুল জাহিদ একজন সফল ব্যবসায়ী। টুনটুন ও লিতুন নামে দুই কন্যার জননী তিনি। তারা ওয়াইডব্লিউসিএ জুনিয়র গার্লস হাই স্কুলে পড়াশোনা করে। বন্ধুরা ও তার পরিবার সবাই তাকে নিয়ে গর্ব করেন। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের আজীবন সদস্য, ইউডিসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক পরবর্তীতে কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত চিকিৎসক তিনি। বিভিন্ন পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে স্বাস্থ্য বার্তার উপর লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল হাইজেনিস্ট কোর্স কারিকুলাম নিয়ে তিনি কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে।
নারী চিকিৎসক ও লেখক তথা একজন ডেন্টাল সার্জন হিসেবে সফল নারী উদ্যোক্তা তিনি। সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা থেকে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে এওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। নারী সমাজ তাকে নিয়ে গর্ব করে।