আজ বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, মিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাল সরবরাহের আগে বস্তার ওপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিলগেটের মূল্য এবং ধান/চালের জাত উল্লেখ করতে হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে। এসব তথ্য হাতে লেখা যাবেনা।
এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করা হলে খাদ্য দ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন, (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন ২০২৩ এর ধারা-৬ ও ধারা-৭ অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে পরিপত্রে বলা হয়েছে।
ধারা-৬ এর অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার সুযোগ রয়েছে। ধারা-৭ এর শাস্তি হিসেবে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড।
গত ৬ ফব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভায় চালের বস্তায় এ সব তথ্য লেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
ওইদিন সভার পর খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন “বস্তার গায়ে মিলগেটের দাম, ধানের জাত এবং উৎপাদন তারিখ উল্লেখ করতে হবে। এতে মিলগেটের দর জানতে পারবেন ক্রেতারা।”
সিদ্ধান্তের ১৬ দিন পর পরিপত্র জারি করল সরকার।
পরিপত্রে বলা হয়, করপোরেট প্রতিষ্ঠান চাইলে চালের বস্তায় মিলগেট মূল্যের পাশাপাশি নিজস্ব সর্বোচ্চ খুরচরা মূল্য-এমআরপিও বসাতে পারে। ৫০ কেজি থেকে শুরু করে ২৫ কেজি, ১০ কেজি, ৫ কেজি, ২ কেজি ও এক কেজির প্যাকেট করা যাবে।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত প্রায় একমাসে সারাদেশে তিন হাজার ৩৮০টির মতো অভিযান পরিচালনা করেছে খাদ্য অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকারসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। এসব অভিযানে জরিমানা আদায় করা হয়েছে কেটি টাকার বেশি। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় লাভের লাভ হয়েছে সামান্য। উল্টো এই অভিযানের ফলে বাজার আরও বেড়ে যেতে পারে বলে অনেক মিল মালিক, পাইকারি বিক্রেতা আওয়াজ দিয়েছেন।
পরিপত্রে এ প্রসঙ্গ বলা হয়, “সম্প্রতি দেশের চাল উৎপাদনকারী কয়েকটি জেলায় পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বাজারে একই জাতের ধান হতে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে গেলে বা অকস্মাৎ বৃদ্ধি পেলে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পছন্দমত জাতের ধান, চাল কিনতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
“এ অবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে চালের বাজার মূল্য সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে, ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয়, তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম মনিটরিং এর সুবিধার্থে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে।”
ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় সোচ্চার নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের ট্রেজারার মো. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার এ প্রসঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে এটা সরকারের একটা প্রচেষ্টা। এতে করে কিছুটা সুফল আসতে পারে। অন্যান্য পণ্যে যখন এমআরপি লেখা থাকে তখন আর বেশি টাকা ভোক্তার কাছ থেকে নিতে পারেনা। চালের ক্ষেত্রেও নিশ্চিয় তাই হবে।
“তবে আমাদেরকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। পরিপত্র জারি করার পর তা বাস্তবায়নে মনিটরিংসহ আরও যেসব কিছু করার, তা যদি করে তাহলে অবশ্যই সুফল আসবে।”