কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে, যা চলমান থাকবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ক্লাসে উপস্থিতির ভিত্তিতে দেয়া হবে প্রশিক্ষণ ও যাতায়াত ভাতা।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: অ্যাসেট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে আমরা ৪ মাস বা ৩৬০ ঘণ্টা মেয়াদি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মোট দুই লাখ দক্ষ কর্মী গড়ে তুলব। বর্তমানে দেশে ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে টেকনিক্যাল বা কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন জনবলের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
আমাদের মূল উদ্দেশ্য দেশের কর্মক্ষম তরুণ-তরুণী, প্রতিবন্ধী, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিতদের কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা। যাতে কারিগরি সেক্টরের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতার সঙ্গে কাজে যুক্ত হতে পারে। এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, অন্যদিকে বেকারত্ব হ্রাস পাবে। যা মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ কর্মীর আন্তর্জাাতিক পরিমণ্ডলে কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। যার ফলে জিডিপি বা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারবে এসব দক্ষ জনবল।
কাজের সুযোগ দেশে-বিদেশে: প্রকল্প পরিচালক আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কারিগরি নানা খাতে সারা দেশে কাজের সুযোগ রয়েছে। বলা চলে দেশে কর্মরত মোট জনশক্তির মধ্যে ড্রাইভিং, কম্পিউটার অপারেটিং, নির্মাণ খাত, ইলেট্রিক্যাল খাত, গার্মেন্টস খাত, কৃষি খাত, এসএমই খাতের বড় একটা অংশ কারিগরি কাজের সঙ্গে যুক্ত।
সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এমনকি একক বা যৌথ ব্যক্তি পর্যায়ে কারিগরি খাতের নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অসংখ্য লোকবল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমেই বাড়ছে কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও কাজের সুযোগ।
ফলে দেশের দক্ষ কর্মীরা খুব সহজেই কাজ পাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় প্রতিটি দেশেই বাংলাদেশ থেকে কারিগরি খাতের ট্রেডগুলোতে কর্মী নেয়। এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। ফলে যারা ট্রেডভিত্তিক দক্ষতা দেখাতে পারবে তারাই বেশি সুযোগ পাবে।
প্রশিক্ষণের বিষয়, যোগ্যতা ও আবেদন: অ্যাসেট প্রকল্পের প্রগ্রামার প্রকৌশলী রবীন্দ্রনাথ মাহাত জানান, সারা দেশের বিভাগ ও জেলাভিত্তিক মোট ৮৬টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি), বিটাক এবং নেকটার-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এনএসডিএ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদিত আইসিটি, নির্মাণ, ইলেট্রিক্যাল, গার্মেন্টস, ড্রাইভিংসহ কারিগরি ট্রেডে বা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এতে আইটিবিষয়ক কোর্সগুলোতে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা থাকতে হবে এসএসসি বা সমমান পাস। অন্যান্য ট্রেড কোর্সভেদে ন্যূনতম যোগ্যতা দরকার হবে অষ্টম বা সমমান পাস। সব ট্রেডের ক্ষেত্রেই বয়স থাকতে হবে ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আবেদন ফরম পূরণ করে পাসপোর্ট আকারের দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদের কপিসহ আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
প্রার্থী নির্বাচন ও প্রশিক্ষণের ধরন: ময়মনসিংহ টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ মো. মাহতাব উদ্দিন জানান, ডিসেম্বর, এপ্রিল ও আগস্টে ভর্তির জন্য আবেদন আহবান করা হয়। আবেদন যাচাই-বাছাই করে লিখিত পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হতে পারে। বেকার, আদিবাসী, নারী, প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী কোর্সে ভর্তিতে অগ্রাধিকার পাবে। প্রশিক্ষণের যাবতীয় উপকরণ দেবে টিটিসি কর্তৃপক্ষ। থিওরিক্যাল এবং প্র্যাকটিক্যাল এই দুই পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন দুপুর ২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মোট চার ঘণ্টা ক্লাস হবে। প্রশিক্ষকরা ক্লাসের বুঝিয়ে দেওয়া লেসনগুলো ক্লাসেই মূল্যায়ন করবেন। প্রতি ব্যাচে ভর্তির সুযোগ পাবে ২০ জন।
দেয়া হবে প্রশিক্ষণ ভাতা ও সনদ: প্রশিক্ষণে ভর্তি হওয়া একজন প্রশিক্ষণার্থী সম্পূর্ণ বিনা খরচে প্রশিক্ষণ পাবেন। বরং কোর্স ও লেভেল ভেদে নিয়মিত উপস্থিতি সাপেক্ষে সাধারণ প্রশিক্ষণার্থীকে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা এবং নারী, প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণার্থীকে প্রতি মাসে ২০০০ টাকা হারে প্রশিক্ষণ ভাতা দেওয়া হবে।
এছাড়া প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী উপস্থিতির ভিত্তিতে দৈনিক ৮০ টাকা হারে যাতায়াত ভাতা পাবেন। প্রশিক্ষণার্থীদের উপস্থিতি (Facial Recognition Camera এবং Biometric) পদ্ধতির মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। সম্মানী ও প্রশিক্ষণ ভাতা কোর্স শেষে ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। কোর্স শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মূল্যায়নের জন্য নেওয়া হবে পরীক্ষা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের দেওয়া হবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সনদ ও দক্ষদের চাকরি পাওয়ার সহায়তা করা হবে। সনদপ্রাপ্তদের সরকারি বিএমইটিতে নামও নিবন্ধিত হবে।
প্রশিক্ষণের খোঁজখবর জানবেন যেখান থেকে: প্রশিক্ষণের বিষয়, যোগ্যতা ও ভর্তির দরকারি তথ্য পাওয়া যাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও জেলার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি), বিটাক এবং নেকটার কেন্দ্র থেকে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও ভর্তি শাখা থেকে জানা যাবে সব তথ্য। অ্যাসেট প্রকল্প, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, এফ-৪/বি আগারগাঁও, প্রশাসনিক এলাকা, ঢাকা।
ওয়েবসাইট : www.asset-dte.gov.bd
কেন্দ্র তালিকা
ঢাকা বিভাগ: বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, বাংলাদেশ-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), তেজগাঁও, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)-এর টুল অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, দোহার, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ মোট ২০টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও টিটিসি।
চট্টগ্রাম বিভাগ: বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), চট্টগ্রাম এবং চাঁদপুরসহ ব্রাক্ষণবাড়িয়া, নোয়াখালী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, লক্ষ্মীপুর মোট ১৩টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও টিটিসি।
রাজশাহী বিভাগ: রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ মোট ৯টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টিটিসি, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার), বগুড়া এবং বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) বগুড়াসহ মোট ১১টি কেন্দ্র।
খুলনা বিভাগ: বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, মেহেরপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও টিটিসি এবং বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), বগুড়াসহ মোট ১২টি কেন্দ্র।
বরিশাল বিভাগ: পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠিসহ মোট ছয়টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও টিটিসি।
সিলেট বিভাগ: টিটিসি হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজারসহ মোট পাঁচটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও টিটিসি।
ময়মনসিংহ বিভাগ: ময়মনসিংহ, গৌরীপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর এবং জামালপুরসহ মোট ছয়টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও টিটিসি।
রংপুর বিভাগ: কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধাসহ মোট ১৩টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও টিটিসি।