জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাশ্মিকা মান্দানার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাশ্মিকার সেই ভিডিওটি তৈরি করে ইন্টারনেটে ভাইরাল করা হয়। সে ঘটনায় পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিনেত্রী।
অবশেষে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ডিপফেক ভিডিও তৈরিকারী ব্যক্তির নাম ইমানি নবীন। পুলিশের এই সহায়তার জন্য গতকাল শনিবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন রাশ্মিকা।
ইনস্টাগ্রামে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘দিল্লি পুলিশের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অভিযুক্তদের ধরার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।’ অভিনেত্রী আরো বলেছেন, তাঁর ডিপফেক ভিডিও প্রকাশের পর যারা তাকে সমর্থন করেছিলেন তাদের কাছে তিনি সত্যিই কৃতজ্ঞ।
অভিযুক্ত ইমানি নবীন, যিনি একজন ভিডিও এডিটর এবং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে বাড়িতে থেকে কাজ করেন, পুলিশকে জানিয়েছেন যে তিনি অভিনেত্রীর একজন বড় ভক্ত এবং অভিনেত্রীর নামে তৈরি করা একটি ইনস্টাগ্রাম চ্যানেলে ফলোয়ারসংখ্যা বাড়ানোর জন্য ভিডিওটি তৈরি করেছিলেন তিনি।
হঠাৎ করেই একটি ভিডিও ইন্টারনেটে বেশ তোলপাড় তুলেছে। যদিও ভিডিওটি রাশ্মিকা মান্দানার। তবে এটি একটি ফেক ভিডিও। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে তৈরি এই ভিডিওটি বেশ চমকে দিয়েছে সবাইকে। তাই ভিডিওটি ভাইরাল হতেও বেশি সময় লাগেনি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, লিফটের ভেতরে কালো শর্ট পোশাকে প্রবেশ করছেন অভিনেত্রী রাশ্মিকা। হাসিমুখে লিফটের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকেন তিনি। তবে তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গিতে ফুটে ওঠে অশ্লীলতার ছাপ, যা রাশ্মিকাভক্তরা মেনে নিতে পারেননি। তাই মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি আসলে অন্য এক নারীর। তাঁর মুখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে সম্পাদনা করা হয়েছে রাশ্মিকার মুখ। ভিডিওর আসল নারীর নাম জারা প্যাটেল। তিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক। জারার বিশালসংখ্যক অনুসারী আছে সামাজিক মাধ্যমে।
সাম্প্রতিক সময়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে কাজে লাগিয়ে ভুয়া ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা ক্রমে বেড়েই চলেছে। ‘ডিপফেক’ মূলত এমন প্রযুক্তি, যার সাহায্যে কারো ছবি বা ভিডিও এমনভাবে এডিট করে দেওয়া, যাতে আপাতদৃষ্টিতে আসল-নকলের পার্থক্য বোঝা কঠিন হয়ে যায়। এখন এর জন্য এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
তাই এমন পরিস্থিতিতে ভারতের ইলেকট্রনিকস ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমগুলোর জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। অনলাইনে এ ধরনের ‘ডিপফেক’ ভিডিও ভাইরাল হলে কী কী শাস্তি হতে পারে, তা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তথ্য-প্রযুক্তি আইন ২০০০-এর ৬৬-ডি ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, কম্পিউটার রিসোর্সকে কাজে লাগিয়ে যদি কেউ যোগাযোগের মাধ্যমকে ভুলভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে, কিংবা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়, তাহলে তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, প্রত্যেক ভারতীয় যাতে সুরক্ষিত থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। নাগরিকদের অনলাইন নিরাপত্তা এবং তাদের বিশ্বাস অর্জন করাই মোদি সরকারের কাজ।
এদিকে রাশ্মিকার পর ক্যাটরিনা, কাজল, আলিয়া ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ডিপফেক ভিডিও ভাইরাল হয় অনলাইনে। সদ্যই ভাইরাল হয়েছে নোরা ফাতেহির একটি ভুয়া ভিডিও, যেখানে তাকে একটি ব্র্যান্ডের হয়ে প্রচারণা করতে দেখা গেছে। এটিও ডিপফেক প্রযুক্তিতে তৈরি।