দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
রাজধানীর বনানী কার্যালয় থেকে আজ সোমবার দুপুরে পাঠানো ভিডিও বার্তায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে দল থেকে পদত্যাগ করব।
চুন্নু বলেন, ‘যে সব অভিযোগ করেছে টাকার বিষয়ে, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি বাংলাদেশের কোনো লোক যদি বলতে পারে আমি বা চেয়ারম্যান কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছি দলের জন্য বা প্রার্থীদের দেওয়ার জন্য তাহলে আমি পদত্যাগ করব।’
এর আগে গত রোববার নির্বাচনে ভরাডুবি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগে জাতীয় পার্টির পরাজিত প্রার্থীরা বিশেষ সভা করেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।
একইসঙ্গে টাকা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ভোটে ভরাডুবির জন্য পরাজিত প্রার্থীরা দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব চুন্নুকে দায়ী করেছেন।
নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য কাদের–চুন্নুকে দুষছে জাতীয় পার্টির একাংশ নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য কাদের–চুন্নুকে দুষছে জাতীয় পার্টির একাংশ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৬০টিরও বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে ২৬টি আসনে তাদের ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারপরেও এই আসনগুলোতে জয়ী হতে পারেনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পায় ১১টি আসন। আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়া আসনের বাহিরে কোথাও জয় পায়নি দলটি।
জাতীয় নির্বাচনে এই ভরাডুবির দায় নিয়ে গত শুক্রবার দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগ দাবি করেছেন নেতা-কর্মীরা। ওইদিন পরাজিত কয়েকজন প্রার্থীর নেতৃত্বে নেতা-কর্মী বিক্ষোভ করেন এবং শীর্ষ দুই নেতাকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।
নির্বাচনের আগে থেকেই জাতীয় পার্টিতে নতুন করে দলীয় বিভাজন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে শুরু করে। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ আর চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। রওশন জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদের স্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সরিয়ে জিএম কাদের ক্যু করে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন।
দলে রওশনপন্থি বলে পরিচিত নেতাদের এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এরশাদের নির্বাচনি আসন রংপুর–৩ থেকে নির্বাচন করেন জিএম কাদের। যদিও ধারনা করা হয়েছিল, এরশাদের ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এই আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন। প্রতিবাদে নির্বাচন বর্জন করেন রওশন ও তাঁর অনুসারিরা।
ভোটের পর গত ১২ জানুয়ারি, জাতীয় পার্টির দুই কেন্দ্রীয় নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ ও সুনীল শুভরায়কে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দলের যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কাজী ফিরোজ রশিদ ও সুনীল শুভরায়'কে জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ সহ দলীয় সকল পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন।
জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অন্যতম। তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা–৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। এবার তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন।