আগামীকাল রোববার সারাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোট ও বিরোধী দলগুলোর হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সড়কে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর খামারবাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় খুবই কম সংখ্যক গণপরিবহন চলাচল করছে। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িও কম চলাচল করছে। ফলে বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ ও অফিসগামী যাত্রীদের বাসের জন্য বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
তবে যানবাহন কম হওয়ায় রাস্তা একেবারে ফাঁকা। যানবাহনকে যানজটে দাঁড়াতে হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন কোম্পানির বাস রিকুইজিশনে নেওয়া হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গণপরিবহণের সংকট দেখা দিয়েছে। আবার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর হরতালের কারণেও অনেকে রাস্তায় বাস বের করছেন না। ফলে দুইয়ে মিলে রাস্তায় নেই বাস।
রাজধানীর খামারবাড়ি মোড়ে এম এম লাভলী বাসের চেকার জসিম বলেন, আমাদের ৪০টি বাসের মধ্যে ২৫-৩০টি বাস রিকুইজিশনে নেওয়া হয়েছে। ফলে রাস্তায় আমাদের তেমন গাড়ি নেই। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত আমিই গাড়ি পেয়েছি ৭টি।
একই জায়গায় কথা হয় লাব্বাইক পরিবহনের চেকার সুমনের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের কোম্পানির ৭০টি বাসের মধ্যে ৫০টি রিকুইজিশনে নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় এখন চলাচল করছে মাত্র ২০টি।
ফার্মগেটে শিকড় পরিবহনের হেলপার সাগর আহমেদ বলেন, ভোট ও হরতালের কারণে রাস্তায় তেমন যানবাহন নেই। রাস্তা একেবারে ফাঁকা। যাত্রীও তেমন নেই।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকেই রাজধানীর বাইরে গেছেন। ফলে সকালে অফিস টাইমে রাস্তায় যাত্রী অনেক কম। তবে যারা রাজধানীতে আছেন বা বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হয়েছেন, গণপরিবহন সংকটের কারণে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও গন্তব্যে যাওয়ার বাস পাচ্ছেন না অনেকে।
মাকে নিয়ে গাজীপুর যেতে ফার্মগেট বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থী দুর্জয়। তিনি বলেন, নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। এখন বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু রাস্তায় বাস নেই। এখানে প্রায় আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। মায়ের দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।
খিলক্ষেত যেতে ফার্মগেট বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. ইকরাম। তিনি বলেন, অন্যান্য দিন পাঁচ মিনিট দাঁড়ালেই বাস পাওয়া যেত। আজ আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু বাস নেই৷ একে তো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে গেছে। তার ওপর আবার দেরিও হচ্ছে। যদিও রাস্তা ফাঁকা। বাস পেলে বেশি সময় লাগবে না।
এদিকে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালকে কেন্দ্রে করে বিভিন্ন সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) ভোট বর্জনের আহ্বানে এবং সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারাদেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার (৬ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় শুরু হওয়া এই হরতাল চলবে সোমবার (৮ জানুয়ারি) ভোর ৬টা পর্যন্ত।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেনে আগুন দেওয়রে ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এটিকে নাশকতা বলছে।
আগুনে ট্রেনটির ৫ বগি পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন ৪ জন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।