প্রতিদিন সকাল হলেই রাজা-সম্রাটকে সাজ-সজ্জায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন ৬০ বছর বয়সি নুর মোহাম্মদ। এরপর ঘোড়ার গাড়িতে চেপে দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসেন নাটোর রানী ভবানী রাজবাড়িতে। তারপর সারাদিন রাজা-সম্রাটকে নিয়ে রাজবাড়ির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তরে ছুটে চলেন নুর মোহাম্মদ। এভাবে দীর্ঘ ১৮ বছরে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সংসার খরচ ও দুই ছেলে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। রাজবাড়িতে ঘুরতে আসা সৌখিন পর্যটকরা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ঘুড়ে দেখেন। তার বিনিময়ে পর্যটকরা ১০০-১৫০ টাকা দেন। তা দিয়ে ঘোড়ার খাদ্য ও সংসারের খরচ চালান তিনি।
নুর মোহাম্মদ নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের গোয়ালবাতা এলাকার মৃত শফিউদ্দিনের ছেলে।
পরিবারে নুর মোহাম্মদের স্ত্রী, দুই ছেলে, ছেলেদের বৌ এবং নাতি-নাতনিরা রয়েছে। তবে তাদের দুজনের সংসার চলে রাজা-সম্রাটের উপার্জনের অর্থ দিয়ে।
ঘোড়ার গাড়িতে ৩-৪জন যাত্রী পুরো রাজবাড়ি ঘুড়ে বেড়াতে পারিশ্রমিক হিসেবে নেন মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
ঘোড়া গাড়িতে উঠা কাউছার হোসেন বলেন, রাজা-বাদশারা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বেড়াতেন শুনেছি, আজ প্রথম ঘোড়ার গাড়িতে চড়লাম। অনেক ভাল লাগল। রাজবাড়িতে এসে স্বপ্নও পুরন হলো। পুরো রাজবাড়ির প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প সুন্দর লেগেছে।
তাসলিম খাতুন নামে এক শিক্ষক বলেন, ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বেড়ানোর মজা অন্য রকম। তবে ভয় ভয় লাগছিল। অনেক আগে বন্ধুদের সাথে উঠেছিলাম। আজ অনেক দিন পর পরিবার নিয়ে ঘুড়ে বেড়ালাম। বাচ্চারা অনেক আনন্দ পাচ্ছিল। ১০০ টাকা দিয়ে আমরা পুরো রাজবাড়ি ঘুড়ে আসলাম। কখনো আসলে আবার চড়বো।
কলেজ ছাত্র আরিফ হুসাইন বলেন, রাজবাড়িতে ঘুরতে এসে দেখি ঘোড়ার গাড়ি, তাই লোভ সামলাতে পারলাম না। বন্ধুদের সঙ্গে চড়লাম। অনেক ভাল লাগছিল। জীবনের প্রথম ঘোড়ার গাড়িতে উঠা।
ঘোড়ার গাড়ি চালক নুর মোহাম্মদ বলেন, ছোট বেলা থেকে ঘোড়া আমার খুব পচ্ছন্দের। তাই ১৬ বছর আগে সম্রাট নামে একটি ঘোড়া কেনা হয়। এরপর তাকে নিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে চলছি। এরপর ২ বছর আগে রাজাকে কিনি। তাদের নিয়ে সারাদিন ছুটে চলা। নিংগা থেকে প্রতিদিন নাটোর রাজবাড়িতে আসি। রাজবাড়িতে আসা পর্যটকদের নিয়ে সারাদিন ছুটে চলি। তাদের আয়ে চলে আমার সংসার। পর্যটক বেশি হলে দিনে ৮০০/১০০০ টাকা উপার্জন হয়। অনেক দিন ৪০০/৫০০ টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ৩০০/৪০০ টাকা ঘোড়ার খাদ্য কিনতে হয়। তাদের যত্ন না নিলে চলবে কি ভাবে। ছোলা বুট, গম, খৈল তাদের খুব প্রিয়। একটি ঘোড়া ৮-১০ মণ ওজন নিতে পারে। আমার ঘোড়ায় ৪-৫ জন যাত্রী একসঙ্গে উঠতে পারে। এতে ৬-৭ মণ ওজন স্বাভাবিক থাকে। রাজা-সম্রাট আমার সন্তানের মতো। তাদের সঙ্গে সারাদিন সময় কাটে। তাদের নিয়ে বাকী জীবন চলতে চাই।