সংবিধান সংশোধন করে ১৭ বছর বয়সীদের ভোটার হওয়ার যোগ্যতার বিধান যুক্ত করা হলে নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী কাজ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।
আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
অনেক বিশেষজ্ঞ এবং ২০২৪ এর অভ্যুত্থানকারীদের দাবি ১৭ বছর বয়সীদের ভোটার করা- এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘যাবে না এটা তো আমরা বলিনি। এটা সংবিধান আবার সংশোধন করতে হবে। সংবিধানে তো বলা আছে ১৮ বছর। আমাদের বিধিবিধান যা আছে ভোটসংক্রান্ত সব ১৮ বছরেই আছে। যদি সংবিধান পরিবর্তন করে ১৭ বছর করা হয় আমরা সেভাবে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধান অনুযায়ী চলি। অন্য কারও দিক নির্দেশনায় চলি না। সংবিধান যেটা বলবে সেভাবে আমরা সেটা পালন করব। সুতরাং সংবিধানে যদি ১৭ বছরে ভোটার হওয়ার যোগ্যতার বিধান করে তাহলে সেভাবেই কাজ করা হবে। ভোটার তালিকা আইনে সংশোধনী আনতে হবে। সবকিছু নির্ধারণ হবে সংবিধানে কী কী সংস্কার আনা হচ্ছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ভোটের ট্রেন ট্র্যাকে উঠে গেছে। আমার মনে হচ্ছে, ভোটের ট্রেনের প্রথম স্টেশন চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করল আর কি। কারণ চট্টগ্রাম থেকেই তো মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তাই না। এখান থেকেই আগামী নির্বাচনের মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু হবে। আমার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই প্রথম ফিল্ড ভিজিট। মাঠ পর্যায়ে আর কোথাও যাইনি। এই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে শুরু করলাম।’
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সংবিধানে এখনও সংযোজিত হয়নি। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্যরা কী উপদেশ দেন আমরা দেখি। উনাদের সাজেশন যদি অনুমোদিত হয় এবং সরকার যদি সেভাবে সংবিধান সংস্কারের ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমরা ওইভাবেই নির্বাচন করব। না হলে বিদ্যমান সংবিধানে যেভাবে আছে সেভাবেই করতে হবে।’
বিগত তিনটা নির্বাচনে যারা দিনের ভোট রাতে করেছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না?- এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এটা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বা সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। কেউ আদালতে গেলে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আমাদের তরফ থেকে আমরা আগের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছি না। আমাদের কোনো এরকম সিদ্ধান্ত নেই।’
অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনটি নির্বাচন হয়েছে। এর আগের তিন চারটি নির্বাচন আপনারা দেখেন। যারা একটু বয়স্ক আছেন, আপনারা ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন দেখেছেন না? ওই তিনটি নির্বাচন কেন হয়েছে সেটা আমরা সবাই জানি। বলতে চাচ্ছি না। এখন তো সে পরিস্থিতি নেই। এখন নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। এখানে ডানে, বামে, ওপরে বা নিচে কোনোদিক থেকেই চাপ নেই।’
‘আমরা শুধু এখন বিবেকের চাপে আছি। আর কোনো কিছু না। কোনো বহিঃশক্তির চাপ আমাদের মাঝে নেই। এটা আগের তিনটি কমিশনের ওপর ছিল। ওই তিনটি ইলেকশন এজন্যই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এদেশে সব সম্ভব। ভালো নির্বাচন করা সম্ভব।’
ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অনেক ফেইক ভোটার আছে। অনেক বিদেশি ভোটার হয়ে গেছে। অনেক ভোটার মারা গেছে। আপনাদের কোনো আত্মীয় স্বজন মারা গেলে কেউ গিয়ে কোনোদিন বলেছেন, আমার অমুক মারা গেছে, তার নামটা ভোটার লিস্ট থেকে কেটে দেন। মৃত ভোটার অনেকের নাম এখনো তালিকায় আছে।’
‘পত্রিকায় নিউজ করেন আপনারা, কবর থেকে এসে ভোট দিয়ে গেছে। নাম কাটা যায়নি, সেজন্য কেউ সুযোগ নিয়ে সিল মেরে দিয়েছে। মৃত ভোটার আমরা বাদ দিতে চাই। অনেকেই ভোট দিতে চাই না। আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এ আস্থাহীনতা ফিরিয়ে আনার উদ্যেগ আমরা নিয়েছি।’
এদিন বিকেলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। আমরা এখানে যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তাদের সুবিধা-অসুবিধা, সমস্যা এসব দেখতে এসেছি। তাদের সুপারিশের কথা শুনেছি। এগুলো ঢাকায় গিয়ে আমরা বিবেচনা করব।’
এ সময় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুছ আলী, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।