শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০২৫ ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২
 

ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ঢাবি উপাচার্যের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫, ৫:২৯ অপরাহ্ন

শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল দিনভর উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। অবরোধ করে রাখা হয় উপাচার্যের বাসভবন। সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত মঙ্গলবার রাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়। ওইদিন রাত থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা।

নিজ সংগঠনের নেতার মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় দেখছে ছাত্রদল। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শেষে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ দাবি ওঠে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে জোহরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ভেতরে সাম্যর জানাজা হয়।

সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাদকে সয়লাব ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেভাবে মাদকসেবীদের আড্ডা বজায় রয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের সামান্যতম পদক্ষেপ তারা লক্ষ্য করেননি। তাছাড়া ছাত্রলীগের বিচার নিশ্চিত করতে এ প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু তারা মনে করছেন, এ প্রশাসন দিয়ে হয়তো-বা সে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এমনকি শাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো স্পষ্ট বিবৃতি বা বক্তব্য তারা পাননি।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাই সাম্যকে হারিয়েছি। কিন্তু ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী যেন আক্রান্ত না হয়। পদত্যাগের যে দাবি ছাত্রসমাজ থেকে উঠেছে, আশা করছি, তারা পদত্যাগ করবেন।’

ছাত্রদলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল নামের একজন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন লোককে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। আজকের এ সমাবেশ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে যে প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছে, সে প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই আমার ভাই সাম্যকে আজ মরতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যিনি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সে জন্য তার পদত্যাগ দাবি করছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে উপাচার্যও কোনোভাবে এ ঘটনার দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। গণ-অভুত্থান-পরবর্তী সময়ে দুটি হত্যার ঘটনা প্রমাণ করে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই উপাচার্যেরও পদত্যাগ দাবি করছি।’

নাছির আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলার চরমভাবে অবনতি হচ্ছে। এর আগে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের কর্মী পারভেজকে হত্যা করা হয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি, এ অন্তর্বর্তী সরকারও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সে জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টারও পদত্যাগ দাবি করছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাত পৌনে ১২টার দিকে সাম্য তার সহপাঠী আশরাফুল আলম রাফি ও মো. আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে উদ্যান থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। এ সময় রমনা কালীমন্দিরের উত্তর পাশে বটগাছের কাছে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের একটি দলের বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে কিল, ঘুসি ও ইট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। হঠাৎ একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাম্যর ডান পায়ের রানের পেছনের অংশে উপর্যুপরি আঘাত করে। গুরুতর জখমের কারণে সাম্য মাটিতে পড়ে গেলে হামলাকারীরা বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক দিবস এবং অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বুধবার দুপুরে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট স্থায়ীভাবে বন্ধকরণ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তল্লাশি অভিযান চালানো, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়নের তদারকি কমিটি গঠন, উদ্যানে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও লাইটের ব্যবস্থা এবং পুলিশ বক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172, বাণিজ্যিক বিভাগ : +8802-58316175,+8801711443328, E-mail: info@jobabdihi.com , contact@jobabdihi.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft