প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ৫:৩৬ অপরাহ্ন

মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের রাধাকান্তপুর গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। আশপাশে ৮ কিলোমিটার নেই কোনো ব্রিজ। চলাচলের জন্য প্রতি বছর চাঁদা তুলে নির্মাণ করা হয় বাঁশের সাঁকো। বছর পার হতে না হতেই বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বছরই সাঁকো নির্মাণে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে সময় ও অর্থ দুটোই ব্যয় হয়। ভারি যানবাহন চলাচল না করতে পারায় রোগী বহন করতে স্বজনদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনা। অনেক দূরের রাস্তা ঘুরে আসতে হয় শহরে। কৃষিপণ্য আনা নেয়ায় কৃষকদের পড়তে হচ্ছে কষ্টে। সময়মতো কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পারায় বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হন ওই পারের কৃষক। পরিবহন খরচ বাড়ে দ্বিগুণ।
এই ভৈরব নদের ওপর ব্রিজ না থাকায় বাঁশের সাঁকোই পারাপার হতে হয় বুড়িপোতা ইউনিয়নের অন্তত ৩ গ্রামের মানুষদের। মেহেরপুর শহরসহ অনান্য এলাকায় আসা-যাওয়া করার জন্য এই বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতিতে বারবার মাপজোক হলেও আজও আলোর মুখ দেখেনি ব্রিজ নির্মাণ কাজ। স্থানীয়দের দুর্ভোগের দিন যেন শেষ হবার নয়। তবুও আশায় বুক বেঁধে আছেন তারা। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ হলে ভুক্তভোগীদের দুঃখ ঘুচবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
স্থানীয় রিকশাচালক মকলেস জানান, প্রতিদিন ভৈরব নদীর ওপর তৈরি বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাত্রী নিয়ে পারাপার হতে হয়। মনে সব সময় ভয় কাজ করে কখন যেন ভেঙে পড়ি পানিতে। তবুও উপায় না থাকায় এদিক দিয়েই যাতায়াত করি।
স্থানীয় প্রবীণ আকবার আলী জানান, বাঁশের সাঁকো ভেঙে মাঝে মধ্যেই মানুষ আহত হন। কিছুদিন আগেও সাইকেল নিয়ে পার হতে গিয়ে নিফাজ উদ্দীন নামের এক বৃদ্ধ সাইকেলসহ পানিতে পড়ে যায়। স্থানয়রা ছুটে গিয়ে তাকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছি। দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ দেখে যেতে চান তিনি।
রাধাকান্তপুর গ্রামের আমেনা খাতুন জানান, বর্ষার সময় নৌকায় পার হতে হয়। পানি কমে গেলে বাঁশের সাঁকো। জরুরি চিকিৎসা নিতে শহরে গেলে এখানে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমাদের দুর্দশা ঘুচাতে সরকারি সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।
স্কুল শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, আমাদের অনেক সরকার প্রতিনিধি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। রাধাকান্তপুর ভৈরব নদে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে দু’পারের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।
বুড়িপোতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মুকুল বলেন, বেশ কয়েকবার জমি জরিপের কাজ করেছে এলজিইডি। ঢাকা থেকে একটি টিম এসে জায়গা পরিদর্শন করেছে বহুবার। কিন্তু তারপর আর এগোইনি। আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সদর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সাব্বির উল ইসলাম জানান, আমরা কয়েকবার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু বরাদ্দ পাইনি। বন্দর গ্রামের কিছু মানুষের আপত্তির কারনে কাজটি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।