
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট হিমালয় পাহাড় ঘেষা এই উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য নদী নালা ও খাল বিল। নদীগুলোর মধ্যে- গোয়াইন, পিয়াইন, ডাউকি ও কাপনা নদী উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে নদীগুলো নাব্যতা ও অস্তিত্ব সঙ্কটে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেক নদীর গতিপথ পাল্টে গেছে। চলছে চাষাবাদ ও মাছের ঘের । মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে নদীগুলো। নাব্যতা হারিয়ে কাপনা ও ডাউকি নদী কালের সাক্ষী হয়ে আছে। কাপনা নদী শুরু হয়েছে কুশিয়া নদী থেকে আর শেষ হয়েছে গোয়াইনঘাট নদীতে এসে।
কাপনা নদী বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার(১৭মাইল), গড় প্রস্থ ৭৮ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক কাপনা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর নদী নং ১১।
কাপনা নদীর জৈন্তাপুর ( হরিপুর) অংশ প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। গোয়াইনঘাটের ডৌবাড়ী ইউনিয়নের হাটগ্রাম এলাকার দারাখাই হতে গোয়াইন নদী পর্যন্ত ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রায় চার কিলোমিটার নদী জুরে বুরো ধানের বীজতলা হিসেবে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় কাপনা নদীর মুলকটিকরের ঘাট,বাগেরখালি ঘাট,হাটগ্রাম ফুলের কান্দি ও লংপুর সহ বেশ কিছু স্থান ভরাট হয়ে যাওয়ায় সবজি চাষ ও ধানের বীজতলা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, কাপনা নদীতে এক সময় সাড়া বছর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ধান , বালি, পাথর, মরিচ প্রয়োজনীয় মালামাল বুঝাই করে ব্যবসায়ীরা নদী পথে যাতায়াত করতেন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীটি ভরাট হওয়ায় প্রায় ২০ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে নৌকা চলাচল হয় না। কাপনা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে সহজেই লোকালয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি উঠে পরে। অতি দ্রুত খনন না হলে গোয়াইনঘাট উপজেলা বারবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
স্থানীয় প্রবীন মুরব্বি রিয়াজ উদ্দিন বলেন, কাপনা নদীতে এক সময় সাড়া বছর পানি থাকতো এবং নৌকা চলাচল করতো। সেই নদী আজ ধানি জমি, মৎস্য ও হাসেঁর খামার। ইতোপূর্বে কাপনা নদীতে পাথর ও বালু বুঝাই বড় বড় নৌকা চলতো। নদী ভরাটে ধান ক্ষেত ও মাছের ঘেরে পরিণত হয়েছে। তিনি সরকারের কাছে খননের দাবি জানান।
গোয়াইনঘাটের নদীগুলো খননে লাভবান হতে পারেন সরকার। নাব্যতাও ফিরবে, খননে প্রাপ্ত বালু, পাথরসহ বিপুল খনিজ সম্পদ বিক্রিতে রাজস্ব আয়ও সম্ভব।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী বলেন, কাপনা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকরা সেচের জন্য পানি পাচ্ছেন না। নদী খননে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, কাপনা নদীটি কুশি নদী হতে সারীগোয়াইন নদী পর্যন্ত বিস্তৃত যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭ কিলোমিটার। নদীর হরিপুর বাজার হতে কুশি নদী পর্যন্ত অংশ শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশই শুকিয়ে যায় ফলে নদীর উভয় পাশে বিস্তৃর্ণ এলাকা পানির অভাবে কৃষকেরা চাষাবাদ করতে পারে না। স্থানীয় জনগনের দীর্ঘ দিনের দাবী নদীর উক্ত অংশ পুনঃখনন করার। সে মোতাবেক ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (২য় পর্যায়)" শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নদীটি পুনঃখনন করার জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নৌ চলাচল সুবিধা এবং নিষ্কাশনসহ সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে ফলে বিস্তৃর্ণ এলাকা চাষাবাদের আওতায় আসবে, শুষ্ক মৌসুমে রবি শষ্যের চাষাবাদ করা যাবে তাছাড়া নদী খননের ফলে উভয় পাশে রাস্তা হবে এতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বনায়নসহ আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।