শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬ মাঘ ১৪৩১
 

নিউমোনিয়া বাড়লেও শিশুদের জন্য আইসিইউ নেই খুলনা মেডিকেলে
মো: জোবাইর ইসলাম অলি
প্রকাশ: সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:০৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:০৫ অপরাহ্ন

বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীত মৌসুমে শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। এ রোগে আক্রান্ত মুমূর্ষু শিশুদের সাধারণত পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) রেখে চিকিৎসা করা হয়, যেটিকে বলা হয় শিশুদের আইসিইউ। 

তবে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) শিশু ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়নি অত্যাবশ্যকীয় এ ইউনিট। বাধ্য হয়ে চিকিৎসকরা রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠাচ্ছেন। 

দেশের বিভাগীয় শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোয় শিশু ওয়ার্ডের জন্য অবশ্যই আইসিইউ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, অন্য সময়ের তুলনায় শীত মৌসুমে শিশুদের নিউমোনিয়া বেশি দেখা দেয়। দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। 

আইসিডিডিআর, বির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। হাসপাতালে ভর্তি হয় অন্তত ৬ লাখ ৭৭ হাজার।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে খুলনার বয়রায় প্রতিষ্ঠিত হয় ২৫০ শয্যার খুলনা হাসপাতাল, যা ১৯৯২ সালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রূপান্তর হয়। ২০০৮ সালে ৫০০ শয্যায় উন্নীত হওয়া হাসপাতালটির ১৬টি বিভাগে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার আশায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, পিরোজপুর, ঝালকাঠিসহ আশপাশের জেলা থেকেও রোগীরা আসে। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে তিন গুণেরও বেশি। বহির্বিভাগেও রয়েছে রোগীর চাপ।

তবে চিকিৎসক ছাড়াও নার্স, থেরাপিস্ট, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ৫৩টি পদ শূন্য রয়েছে হাসপাতালটিতে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা সেবাপ্রত্যাশীরা।

রোগীরা বলছেন, হাসপাতালের অভ্যন্তর ময়লা ও মেডিকেল বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লার কারণে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে গোটা হাসপাতালজুড়ে। দুর্গন্ধে নাক চেপে চলাচল করছেন সবাই।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. শেখ সফিকুল ইসলাম জানান, মৌসুমের শুরু থেকেই এবার হাসপাতালগুলোয় শীতজনিত রোগে আক্রান্তের চাপ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতজনিত রোগ মোকাবেলায় চিকিৎসকরা নির্দেশনা অনুযায়ী সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল। তবে অন্যান্য ওয়ার্ডের মতো শিশু ওয়ার্ডেও রয়েছে জনবল সংকট। কিন্তু রোগীর কমতি নেই। নভেম্বরে শিশু ওয়ার্ডে ১ হাজার ৩৫২টি শিশুর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ৪৪টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি থাকছে ১২০টি শিশু। এর মধ্যে নিউমোনিয়ার পাশাপাশি জ্বর, শ্বাসকষ্টজনিত ও ডায়রিয়া রোগীও রয়েছে।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সৈয়দা রুখশানা পারভীন দৈনিক জবাবদিহিকে বলেন, ‘অভিভাবকদের নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো জানতে হবে। নিউমোনিয়া বা ডায়রিয়া হলে দেরি করা যাবে না, দ্রুত নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।’

তবে আক্রান্ত শিশুদের মায়েরা বলছেন, নভেম্বরের শুরু থেকেই শিশুরা নিউমোনিয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়ায়ও আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, সর্দি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। শিশু দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কিছু খেতে পারছে না। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালমুখী হচ্ছেন তারা।

হাসপাতালটির চিকিৎসকরা বলছেন, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশুদের পৃথক পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া অত্যাবশ্যক। ১৯৮৯ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলেও শিশু ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়নি ইউনিটটি। বাধ্য হয়ে চিকিৎসকরা রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠান।

এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মহসীন আলী ফরাজী বলেন, ‘অন্য সময়ের তুলনায় শীত মৌসুমে শিশুদের নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। এ সময় শিশুরা ডায়রিয়ায়ও আক্রান্ত হয়। শিশুদের সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সংক্রমণ কমবে। তবে আমরাও সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘অনেক মুমূর্ষু শিশুদের পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। তবে আমাদের এখানে এটি নেই। বাধ্য হয়ে রোগীদের অন্যত্র পাঠাতে হয়। পিআইসিইউর অবকাঠামো প্রস্তুতের চেষ্টা চলছে। এটা হলে হাসপাতালে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা আরো এগিয়ে যাবে।’

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172, বাণিজ্যিক বিভাগ : +8802-58316175,+8801711443328, E-mail: info@jobabdihi.com , contact@jobabdihi.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft