জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আরো চাপ বাড়াতে চায় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করেছে দলটি। সারা দেশে একই ধরনের আরো শোডাউন করার চিন্তা-ভাবনা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সরকার নানা ধরনের সংকটে আছে।
সামনে অর্থনৈতিক সংকট বাড়বে। খাদ্যসংকটও প্রকট হতে পারে। ফলে নির্বাচনের দাবিকে পাশ কাটানো তাদের জন্য কঠিন হবে। এদিক বিবেচনা করে বিএনপি নির্বাচনের দাবি সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে।
গত শুক্রবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের বড় জমায়েতের উদ্দেশ্য ছিল সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালো করা। এ জন্য নয়াপল্টন থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি ও জনগণ যে নির্বাচনমুখী তা বোঝাতেই মূলত সংসদ ভবনের সামনে শোভাযাত্রা শেষ করার উদ্দেশ্য ছিল। শোভাযাত্রার স্লোগানও ছিল নির্বাচনের দাবিতে।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারকাজ শেষ করে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, গণতন্ত্রবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তিকে সতর্ক করা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা—এই তিন বিষয় মাথায় রেখে ধাপে ধাপে কর্মসূচি বাড়াবে বিএনপি। দলের উচ্চমহল ধারণা করছে, বড় ধরনের জমায়েতের ফলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোজগতে নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। বড় কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের যে উপস্থিতি তা নির্বাচনের দাবি জোরালো করবে।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও নির্বাচনের দাবি জোরালো করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে আগামী মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচন দাবি করবে বিএনপি।
এই দাবিতে কর্মসূচি পালন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশকে নির্বাচনমুখী করাই সরকারের প্রধান কাজ হওয়া উচিত। কিন্তু সেদিকে তাদের নজর কম। ফলে দেশের বৃহত্ গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনের জোরালো দাবি জানাচ্ছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, নভেম্বর মাসজুড়ে দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের কাজ হবে। এরই মধ্যে মাসের শুরুতে ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ১০ সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল ও বিভিন্ন সংগঠনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার। চলতি মাসে কয়েকটি জেলার সম্মেলন হওয়ার কথাও রয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, মূলত ডিসেম্বর থেকে কর্মসূচির গতি বাড়াতে শুরু করবে বিএনপি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও বড় শোডাউন করবে। এ ছাড়া ইস্যুভিত্তিক কয়েকটি কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
দলের কর্মকৌশল তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন এমন একজন নেতা বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। কিন্তু সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কোনো ধরনের কথা বলছে না। সরকারকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে আরো দুই থেকে তিন মাস সময় দেওয়ার বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা একমত হয়েছেন। তবে এর মধ্যে কর্মসূচি বাড়াতে শুরু করবেন তাঁরা।
এদিকে শুক্রবারের শোভাযাত্রায় বড় ধরনের জমায়েত করতে পারায় দলের নীতিনির্ধারকরা বেশ খুশি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীতে এটি বিএনপির সবচেয়ে বড় শোডাউন। এতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ৩১ দফা নিয়ে সেমিনার করবে বিএনপি। আগামী ১৪ নভেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। এই সেমিনারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা অংশ নেবেন। যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ বিশিষ্টজনরাও এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন।