বিদ্যমান সংবিধান বাতিল ও রাষ্ট্রপতির অপসারণ চেয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী সব রাজনৈতিক দলের প্রতি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের দেওয়া পাঁচ দফা গণঅভ্যুত্থানকে বিপ্লবে রূপান্তর করার চূড়ান্ত দফা। বাংলাদেশ প্রশ্নে স্থায়ী সমাধান। যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি, তারা কখনো বাকশালী ও মুজিববাদী ৭২-এর সংবিধানের পক্ষে থাকতে পারে না। মুজিববাদী ৭২-এর সংবিধান ছুঁড়ে ফেলতে হবে।
সংবিধান ও রাষ্ট্রপতির প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবিও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ৩ আগস্ট আমরা ‘ফ্যাসিবাদের বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ ১ দফা ঘোষণা দিয়েছিলাম। সব গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে। আমাদের নেতৃত্বে তারা রাস্তায় এসে রক্ত দিয়েছে। আমাদের প্রথম সফলতা শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করতে পেরেছি। কিন্তু ফ্যাসিবাদ বিলোপের প্রশ্ন এখনো সমাধান হয়নি।
নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, আমরা ফ্যাসিস্ট শাসনের অংশ এখনো বঙ্গভবনে দেখছি। এই শক্তি হঠাতে আমরা গণঅভ্যুত্থানের শক্তি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছি। কোনো রাজনৈতিক দল না এলে আমরা তাদের বাদ দিয়ে জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে এর সমাধান করব।
এক প্রশ্নের উত্তরে সোমবার বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচির বিষয়ে হাসনাত বলেন, তারা যে দাবি করছে, তার সঙ্গে আমাদের একাত্মতা রয়েছে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় করেছে, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে বিশ্বাস করি।
নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান দেশের বাইরে। এ মুহূর্তে কোনো অঘটন ঘটলে। ফলে আপনারা শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার দিকে যান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ওপর আস্থা রেখে একসঙ্গে আন্দোলন করুন।
পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নাগরিক কমিটি কাকে চায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হওয়া উচিত।
বুধবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে কালো মাস্কে মুখ ঢেকে ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীর মিছিল করার বিষয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। তাদের এই সপ্তাহের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসিদের যেমন কোনো মানবাধিকার ছিল না, ছাত্রলীগেরও তেমন কোনো মানবাধিকার নেই
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ১৬ বছর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বানিয়ে নৃশংসতা চালিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। জঙ্গি সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যত উপাদান দরকার, তার সব ছাত্রলীগের মধ্যে রয়েছে। তাদের দেখলেই দমন করার জন্য দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানান হাসনাত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সমন্বয়ক সারজিস আলম, আব্দুল কাদের, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন, আরিফুল ইসলাম আদীবসহ প্রমুখ।