লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, ছাত্র-জনতার চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী, টাকা পাচার, টাকা লুণ্ঠনকারী এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় হয়েছে। এ অসীম আত্মত্যাগকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের সকল কর্মকাণ্ডগুলি স্বচ্ছতা ও সততার সাথে দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন না হলে, সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। অনেকগুলি নিয়োগ নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। হুজুগের মাথায় লোক-দেখানো কাজ করলে হবে না। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে অধিকতর সতর্কতার সাথে মনোনয়ন বা নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও উপদেষ্টা এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অতীত ইতিহাস জানা না থাকলে বা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব থাকলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে অথর্ব, অকর্মণ্য, ধীরগতির ব্যক্তিদের দিয়ে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে না। ছাত্র-জনতার রক্ত বৃথা যাবে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মগবাজারে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
কর্নেল অলি বলেন, আমরা এলডিপির পক্ষ থেকে ৩১/০৮/২০২৪ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে বৈঠকে মোট ৮৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করি, যা আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়, বরং দেশের সার্বিক মঙ্গলের জন্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সংস্কার বাস্তবায়নের গতি হতাশাব্যঞ্জক।
তিনি বলেন, একজন উপদেষ্টা বলেছেন যে, জাতীয় সংগীত একটি বিতর্কিত বিষয়, সুতরাং এটি পরিবর্তন করা যাবে না। তার জানা উচিত, জনগণের মতামতের উপর ভিত্তি করে সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব। গণভবন কারো বাপের ভবন না, বরং জাতীয় প্রতিষ্ঠান। মিউজিয়াম করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে প্রশ্ন হল গণভবনে কেন? অন্য জায়গায় নয় কেন? জাতীয় প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার আইনগত ভিত্তি এখন কোথা থেকে পেলেন? ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর অন্য কিছুই অধিকতর গুরুত্ব পেতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। অসংখ্য আহত ছাত্র-জনতা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। এরই মধ্যে বন্যায় কয়েকটি জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বার বার ভাটির দেশ হিসেবে আমরা উজানের দেশের বৈরিতার স্বীকার হচ্ছি।
শেখ হাসিনার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ও লোটা-বহনকারী অনেক ব্যক্তি এখনও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের ব্যাপারে জরুরিভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দুর্নীতিবাজ একজন ব্যক্তি এখনও পর্যন্ত দেশের ১ নম্বর আসনে বসে আছে। এটার কোন যুক্তিসংগত কারণ নাই। সংবিধানের দোহাই দিয়ে, যারা তাকে এই আসনে বসিয়ে রেখেছে তারা পক্ষান্তরে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করছে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে, দেশকে ভারতের কাছে নতজানু করে ফেলেছে। আমরা ইচ্ছা করলেও প্রতিবেশী বদলাতে পারব না। সুতরাং উভয় দেশের সুসম্পর্কের স্বার্থে অনতিবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন-এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, খাইরুল কবির পাঠান ও হামিদুর রহমান খান প্রমুখ।