স্বাস্থ্য নিয়ে কমবেশি সবাই সচেতন। কিন্তু সচেতনতার মাত্রা যখন উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে তখন এ অবস্থাকে হাইপোকন্ড্রিয়া বলা হয় । ইপোকন্ড্রিয়া হলো স্বাস্থ্য নিয়ে অমূলক ভয়-ভীতি। এটি মূলত দীর্ঘমেয়াদি মানসিক দুরবস্থা যেমন ভয়, উদ্বেগ ও শঙ্কার কারণে হয়ে থাকে। সহজ ভাষায় একে হেলথ অ্যাংজাইটি বলা হয়। হেলথ অ্যাংজাইটি বা হাইপোকন্ড্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি জানা কিংবা অজানা অসুখের ভয়ে ভীষণ ভীত হয়ে পড়েন।
ধরুন, দেশের চলমান অবস্থার কারণে আপনি বিক্ষিপ্ত। মানসিক চাপে আছেন। এর পাশাপাশি আপনি ভাবছেন আপনার প্রেশার বুঝি হাই হয়ে গেল, আপনি হয়তো স্ট্রোক করবেন। অথচ আপনার হাই প্রেশারের কোনো সমস্যা আগে ছিল না। এই বুঝি ক্যান্সারের বীজ আপনার শরীরে দানা বাঁধতে শুরু হলো, শরীরের তিলগুলো কালো থেকে ধীরে ধীরে লাল-খয়েরি হয়ে যাচ্ছে কিনা, মাথায় টিউমার হয়েছে কিনা অথবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা ইত্যাদি নিয়ে শঙ্কিত হচ্ছেন। অর্থাৎ আপনি অসুস্থ নন, কিন্তু ক্রমাগত ভাবছেন এই বুঝি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। পেটে সামান্য ব্যথা হলে চিকিৎসকের কাছে চলে যাচ্ছেন, এক্স-রে করে চিকিৎসক নিশ্চিত করলেন আপনার কিছু হয়নি। তবুও আপনি নিশ্চিত হতে পারছেন না যে আপনি সুস্থ। এ ধরনের মানসিক অবস্থা হাইপোকন্ড্রিয়া বা হাইপোকন্ড্রিয়াসিসের লক্ষণ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাইপোকন্ড্রিয়াক বলা হয়। সহজ ভাষায় একে উদ্বেগজনিত অসুস্থতাও বলা হয়। যে কোনো বয়সে এ ব্যাধি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞের ভাষ্যমতে: জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও সাইক্রিয়াটিস্ট ডা. হেলাল উদ্দীন আহমেদ জানান, হেলথ অ্যাংজাইটি হলো এক ধরনের উদ্বেগজনিত অসুস্থতা। এটি যে কোনো মানুষের হতে পারে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় ধরে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগজনিত রোগে আক্রান্ত, তারা হেলথ অ্যাংজাইটিতে বেশি ভোগেন।
এ রোগে আক্রান্তরা মনে করেন তাদের মরণঘাতী রোগ হয়েছে। পেটসহ সারা শরীরে তারা অস্বস্তি অনুভব করেন। তারা বারবার অসুখ নিয়ে ভাবতে থাকেন, গুগলে পুনরায় অসুখের উপসর্গ খুঁজতে থাকেন।
হাইপোকন্ড্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ: ব্যক্তির মানসিক অবস্থা দেখে বোঝা যাবে তিনি হাইপোকন্ড্রিয়ায় আক্রান্ত কিনা। যেমন সম্ভাব্য অসুস্থতা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা, সামান্য উপসর্গ দেখা দিলে বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, গুরুতর শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশি ভাবা, ক্ষুদ্র অসুস্থতাকে গুরুতর মনে করা, শারীরিক উপসর্গ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকা, স্বাস্থ্যের ক্ষতিজনিত কারণে বন্ধু-আত্মীয় ও বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দেখা না করা এবং তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা, নিজের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বারবার চিন্তা করা, ইন্টারনেটে অসুস্থতাজনিত বিষয়গুলো অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট রোগের উপসর্গ, নিরাময় ইত্যাদি বারবার খোঁজা।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বংশের কারও যে কোনো ধরনের অ্যাংজাইটি থাকলে তা অন্যজনের হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে হেলথ অ্যাংজাইটি থাকলে বংশের অন্যদেরও তা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তবে তা হবেই এমন কোনো গবেষণা নেই। বংশগত রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ পূর্বপুরুষের থাকলে পরবর্তী প্রজন্মে বর্তায়, কিন্তু হাইপোকন্ড্রিয়া সেভাবে বর্তায় না। অর্থাৎ এ রোগ ছড়াতেও পারে, নাও ছড়াতে পারে। যদি ব্যক্তি নিজে থেকে মানসিক এ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যান তাহলে তিনি এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হবেন। এর জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির অতি সংবেদনশীলতাই দায়ী।