কয়েক বছর ধরেই অস্তিত্বসংকটে ভুগছে ব্রাজিল। নিজেদের যেন চেনাতেই পারছিল না। উদ্দেশ্যবিহীন এলোমেলো দলটিকে দেখে বারবারই মনে হচ্ছিল—হলুদ জার্সির আড়ালে খেলা এই দল কি সত্যিই ব্রাজিল!
এভাবে এগিয়ে চলা ম্যাচটি নির্ধারিত ৯০ মিনিটে থাকে গোলশূন্য। কোপা আমেরিকার নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে। সেখানে উরুগুয়ের কাছে ৪-২ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল। সেমিফাইনালে উরুগুয়ের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া। এ ম্যাচের আগে হওয়া আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে পানামাকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে তারা।
যেভাবেই হোক ব্রাজিলকে রুখতে হবে—উরুগুয়ের খেলোয়াড়দের এই প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন মাঠে ছিল স্পষ্ট। তাঁরা হয়তো অনুচ্চারে ব্রাজিল দলের উদ্দেশে বলছিলেন, তোমরা পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারো, কিন্তু কোপা আমেরিকায় তোমাদের চেয়ে আমরাই এগিয়ে, আর্জেন্টিনার সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৫ বার এই ট্রফি জিতেছি আমরা! ক্ষণে ক্ষণে ফাউল করে ব্রাজিলের মুভগুলো অঙ্কুরেই বিনাশ করে দিচ্ছিলেন আরাউহো-উগারতেরা।
এসব ক্ষেত্রে ব্রাজিলের পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, আশি, নব্বই বা এর পরের দশকের দলগুলোও যা করত; ব্যক্তিনৈপুণ্যের অনন্যসাধারণ ঝলকে ম্যাচ বের করে নিত, সেটা দেখাতে পারেনি এই দলের কেউ। সেই সময়ের পেলে, গারিঞ্চা, সক্রেটিস, জিকো, রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনিওর মতো প্রতিভাই–বা কোথায় এই ব্রাজিল দলে! চোটের কারণে নেইমার এবারের কোপা আমেরিকাতেই নেই আর ব্রাজিলের এই দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ভিনিসিয়ুস জুনিয়র নিষেধাজ্ঞার কারণে ছিলেন না আজ। তাঁর অবর্তমানে ব্রাজিলের ফুটবলের বর্তমান রাফিনিয়া-রদ্রিগো আর ভবিষ্যৎ এনদ্রিক তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি।
উরুগুয়ে বরাবরের মতো তাদের ট্রেডমার্ক শরীরনির্ভর ফুটবল খেলেছে। ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিটেই ৯টি ফাউল করেছে তারা। সেই শরীরনির্ভর ফুটবলের তোড়ে একপ্রকার উড়ে গেছে ব্রাজিল। এই সময়ের মধ্যে গোলের কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা। ম্যাচে ব্রাজিল প্রথম সুযোগটা পায় ২৪ মিনিটে। সেটাও উরুগুয়ের রক্ষণের ভুলে। উগারতের ভুলে বক্সের কাছাকাছি বল পেয়ে যান এনদ্রিক। কিন্তু তিনি গোলে শট নেওয়ার জায়গা না পেয়ে বল ঠেলে দেন বাঁ দিকে থাকা রদ্রিগোকে। বলের কাছে পৌঁছাতেই পারেননি তিনি।
১০ মিনিট পর আবার সুযোগ আসে ব্রাজিলের। এবার বক্সের বাইরে বল পেয়ে উরুগুয়ের তিন ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যান রাফিনিয়া। বক্সে ঢুকে জোরালো শটও নেন। কিন্তু সেই শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন উরুগুয়ের গোলকিপার রোচেত। সুযোগ হাতছাড়া করেছে উরুগুয়েও। ৩৩ ও ৫২ মিনিটে সহজ দুটি সুযোগ থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন দারউইন নুনিয়েজ। নুনিয়েজের ৫২ মিনিটের সুযোগ মিসের পর কিছুটা হলেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ব্রাজিল। কিন্তু পরিষ্কার কোনো সুযোগ তারা তৈরি করতে পারেনি। এ সময় ফাউলের মাত্রাও যেন বাড়িয়ে দেয় উরুগুয়ের রক্ষণ। পুরো ম্যাচে উরুগুয়ে ফাউল করেছে ২৬টি।
৭১ মিনিটে রদ্রিদোকে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন নাহিতান নানদেজ। সেই ট্যাকল এতটাই ভয়ংকর ছিল যে রেফারি ভিএআর দেখে তাঁকে লাল কার্ডই দেখান। ১০ জনের দল হয়ে যাওয়া উরুগুয়ে পরের সময়টা একটু বেশিই রক্ষণাত্মক হয়ে যায়। এর সুযোগ নিয়ে তাদের চেপে ধরার চেষ্টা করে ব্রাজিল। কিন্তু গোলের স্পষ্ট সুযোগ সেভাবে তৈরি করতে পারেনি। শেষ দিকে সাভিনিও-মার্তিনেল্লিদের নামিয়ে ব্রাজিল কোচ খেলার গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। ব্রাজিলের খেলার গতি এতে বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোল আর আসেনি।
ম্যাচ যখন টাইব্রেকারে গড়ানো সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, ব্রাজিল কোচ দ্রুত তিনটি পরিবর্তন করেন। উদ্দেশ্য ছিল একটাই—টাইব্রেকারে যেন পেনাল্টি শট নেওয়ার পর্যাপ্ত বিকল্প পাওয়া যায়। কিন্তু টাইব্রেকারে সেই বিকল্পের একজন দগলাস লুইসও গোল করতে ব্যর্থ হন। তাঁর শট উরুগুয়ের গোলকিপারকে ফাঁকি দিলেও লাগে পোস্টে। এর আগে ব্রাজিলের অধিনায়ক এদের মিলিতাওয়ের শট ফিরিয়ে দেন উরুগুয়ের গোলকিপার। অন্যদিকে উরুগুয়ের হিমিনেজ টাইব্রেকারে গোল না পেলেও নিজেদের শট জালে পাঠান ফেদে ভালভের্দে, বেনতাঙ্কুর, আরাসকায়েতা ও উগারতে।
এর আগে পানামার বিপক্ষে কলম্বিয়াকে জেতাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন হামেস রদ্রিগেজ। দলের ৫ গোলের ২টিতে সহায়তা করেছেন তিনি, নিজে পেনাল্টি থেকে করেছেন ১টি গোল। দলের অন্য ৪টি গোল জন করদোবা, লুইস দিয়াজ, রিচার্ড রিওস ও মিগুয়েল বোরহার।