ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। উন্নয়ণের কারণে দেশের জমি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ করে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিকলাঙ্গ হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে হবে। পরিবেশ দূষণের উপাদান প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধে সকলের সহযোগিতায় সমাধান খুঁজে বের করতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সকাল ১১টায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিবেশ অধিদপ্তর মিলনায়তনে আয়োজিত ‘উষ্ণায়ন, খরা ও মরুকরণরোধে ভূমি ও জলাশয় রক্ষার এখনি সময়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
বাংলাদশে পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বেলা, এএলআরডি, নাগরিক উদ্যোগ, বারসিক, উন্নয়ন সমন্বয়, ক্যাপস, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, সিডিপি, ইকিউএমএস, গ্রীন ভয়েস, আরডিআরসি, মানবিক উন্নয়নকেন্দ্র, সিডাব্লিউএফ, কাপ, আইডাব্লিউবি, সাওয়াব এবং ডিইউএস সহ ১৮টি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জলবায়ু সংসদ বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয়, এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জলবায়ু সংসদ বাংলাদেশ ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, এমপি। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ।
সঞ্চালনায় ছিলেন, বাপা’র সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। উপস্থিত ছিলেন, বাপা’র সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহীদুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।
যৌথভাবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অনুষদের ডিন ও বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, এএলআরডির প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সানজিদা খান রিপা ও বেলা’র গবেষণা সমন্বয়ক রেহমুনা নুরাইন।
প্রধান অতিথি তানভীর শাকিল জয় এমপি বলেন, দূষণের জন্য উন্নত বিশ্বকে আমরা দায়ি করি, কিন্তু আমরাই আবার তাদের অবস্থানে যাওয়ার জন্য উচ্চাকাঙ্খা করি। পরিবেশ সংরক্ষণ করা সরকারের পক্ষে একা সম্ভব নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশকে সংরক্ষণ করেই উন্নয়ণ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, এমপি বলেন, রাজিনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা পরিবেশ বিধ্বংসী কাজে জড়িত। হাওড়ের কিছু উন্নয়ণ কাজ ওই অঞ্চলে বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই উন্নয়ণ করতে হলে অবশ্যই পরিকল্পিত ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ণ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আবদুল হামিদ বলেন, পরিবেশ আদাতল আইন সংশোধনের পরিকল্পনা চলছে। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে বিভাগীয় শহরের কিছু স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহারের কার্যক্রম চলছে, ভবিষ্যতে এটি কিভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়েও পরিকল্পনা চলছে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিকলাঙ্গ হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে হবে। রাজউকের দায়িত্ব ঢাকা শহরের ভূমি নিয়ন্ত্রণ করা কিন্তু; তারা এখন ডেভেলপারের ভূমিকা পালন করছে। বন, পাহাড়, পরিবেশ ধংস করে ও বনের মধ্যে অবাধে একের পর এক রিসোর্ট তৈরী করা হচ্ছে। যত্রতত্র উন্নয়নের নামে পরিবেশ উজাড় করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। উন্নয়নের নীতিমালা পূনঃমুল্যায়ণ করে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। এক বছরে ১২ লাখ গাছ কাটা হয়েছে। উষ্ণায়ন বৃদ্ধির অন্যতম কারণও এটি। গাছ কাটায় ফলে দাবদাহ শুরু হয়েছে, কৃষি সভ্যতায় আঘাত হেনেছে। প্লাস্টিক উৎপাদন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।
তারা আরও বলেন, ৫০ বছর আগেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বঙ্গোপসাগরের পাশ দিয়ে যে সুন্দরবন রয়েছে সেটি হচ্ছে বেড়িগেট, এটা রক্ষা করতে না পারলে খুলনা, চাঁদপুর, ঢাকা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ ডুবে যাবে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো হল বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা এবং নির্বিচারে বৃক্ষনিধন। ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও ০.৫০ থেকে ১.৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তাপদাহের কারণে জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আগামী ২০-২৫ বছরে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে।