ড. ইউনূসের কথা জনগণের জন্য অপমানজনক: আইনমন্ত্রী
আজ বুধবার (১২ জুন) সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলে সঙ্গে বৈঠক শেষে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা মন্তব্যগুলো অসত্য এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য অপমানজনক।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের দেশ থেকে অনেকগুলো প্রশ্ন এসেছে সেসব বিষয় তারা পরিষ্কার হতে চেয়েছিলেন। ড. ইউনূসের ব্যাপারে যেসব মামলা রয়েছে আমি তাদের সেসব বলেছি। তিনি শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন করেছিলেন সেখানে মামলা হয়েছে। তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০৮ জন শ্রমিক ব্যক্তিগতভাবে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশসহ পশ্চিমা দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে বিবেচনা করে। ঠিক সেভাবেই ড. ইউনূসের মামলা হচ্ছে। দেশের যে কোনো নাগরিক আইন ভঙ্গ করলে তার যেমন বিচার হয় ড. ইউনূসেরও সেভাবেই বিচার হচ্ছে। তবে তিনি (ড. ইউনূস) যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছেন এসব অসত্য এবং এসব কথা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অপমানজনক।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা করেছে। সে মামলার ব্যাপারে আমি বলেছি- মামলাটি আদালতে চলমান। আদালতে যে মামলা চলমান থাকে সে মামলা সম্পর্কে আইনমন্ত্রী কোনো কথা বলেন না সে ব্যাপারটাও তাদের বলেছি। আরেকটি বিষয় আমি বলেছি- তার বিরুদ্ধে ট্যাক্স না দেওয়ার মামলা রয়েছে। তার একটি মামলায় তিনি আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়ে হারার পরে ট্যাক্স দিয়েছেন। অন্য মামলা যেগুলো রয়েছে সেগুলোর ট্যাক্স না দেওয়ার মামলা।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শ্রম আইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি আইনের ব্যাপারে কি করছি, ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, তাদের নির্বাচন কমিশন থেকে একটি টিম এসেছিল সেই টিমে রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কি চিন্তা ভাবনা করছি, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং সর্বশেষ এন্টি ডিসস্ক্রিমিনেশন বেল সম্পর্কেও তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাকে ইউনূস সাহেবের মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। এসব ব্যাপারে তাদের সাথে কথা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা কবে নাগাদ শ্রম আইন পাস করতে যাচ্ছি এসব তারা জানতে চেয়েছিল। আমি তাদের বলেছি- আন্তর্জাতিক শ্রম আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে যে নালিশ করা হয়েছিল সেই নালিশটার শেষ আমরা চাই। আমি তাদের বলেছি শ্রম আইন নিয়ে আমরা যথেষ্ট কাজ করেছি। শ্রম আইন সংশোধন নিয়েও কাজ করেছে। আমার মনে হয় বিষয়টা শেষ করে দেওয়া উচিত।’
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় তাকে দণ্ডও দেওয়া হয়। তবে ড. ইউনূস দাবি করে আসছেন তিনি কোনো অপরাধ করেননি।
বুধবার আদালতের কাঠগড়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আজ সারাক্ষণ খাঁচার ভেতর ছিলাম। আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ার আগে তাদের খাঁচার ভেতরে রাখা ন্যায্য হলো কি না? এটা আমার কাছে গর্হিত কাজ মনে হয়। এ বিষয়ে সবাই আওয়াজ তুলুন।
এদিকে অর্থ আত্মসাতের মামলায় অপরাধ প্রমাণিত হলে অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। সর্বনিম্ন ১০ বছরের সাজা হতে পারে।