মিয়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে, প্রধানত মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী পরিচালিত নতুন সহিংস ও ধ্বংসাত্মক অভিযান চলছে। এ অভিযানে ব্যাপক সংঘর্ষের তথ্য পাওয়া গেছে।
মিয়ানমারের চলমান সংঘাত থেকে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে এবং তাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়ার জন্য ঢাকার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্য থেকে বেসামরিক জীবন ও সম্পদের ওপর সংঘাতের প্রভাব সম্পর্কিত ভীতিকর এবং অস্বস্তিকর সংবাদ পাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুতর কিছু অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা এবং তাদের সম্পত্তি পোড়ানোর ঘটনা।” আর সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বুথিডং ও মংডু শহর থেকে যুদ্ধের কারণে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
লিজ থ্রোসেল বলেন, “বুথিডং শহর কার্যত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।” তিনি আরো বলেন, এমন তথ্য পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত করে যে শহর থেকে সামরিক বাহিনী পিছু হটার এবং আরাকান আর্মি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি করার দুই দিন পর, ১৭ মে আগুন লাগানোর ঘটনা শুরু হয়।
মিয়ানমারের সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে, ২০১৭ সালের আগস্টে, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় পালিয়ে আসে। বর্তমানে, রাখাইন রাজ্যে আনুমানিক ৬ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।
তারা কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও দেশটির সরকার তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করে।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার কয়েক দশক ধরে নিজ দেশের জনগণের বিপক্ষে যুদ্ধ করছে। সাম্প্রতিক কালে তারা বেশ কিছু পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে। এদিকে, বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রোহিঙ্গা যুবকদের তারা যুদ্ধের জন্য নিয়োগ করছে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবারের জন্য আরো খাদ্যের জোগান এবং নাগরিকত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি। তাদের বেশিরভাগকেই যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে মানব ঢাল হিসেবে বা কামানের গোলার খাদ্য হিসাবে।
এদিকে, কক্সবাজার থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আরাকান আর্মি ১৮ মে রাখাইন রাজ্যের বুথিডং শহর পুরোপুরি দখলে নেয়ার পর থেকে রোহিঙ্গারা বিপুল সংখ্যায় পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে আসছে। প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা টেকনাফ, হোয়াইকং, থাইংখালী, ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, নিকুছড়ি, চাকঢালা, জামছড়ি, ফুলতলী, পাইনছড়ি ও আলীকদমের পুয়ামুহুরীর বিপরীতে মিয়ানমার সীমানার বেশ কয়েক কিলোমিটার ভেতরে অবস্থান করছে।
এসব রোহিঙ্গা যেন বাংলাদেশে ঢুকতে পারে, সে জন্য সীমান্ত খুলে দিতে ঢাকাকে চাপ দিচ্ছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ। বিদেশিদের এমন চাপে বিরক্ত হয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
সামরিক জান্তার নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে আছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। কিন্তু এই সাত বছরে একজন লোকও ফেরত নেয়নি দেশটি। এ অবস্থায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আরও রোহিঙ্গা নিতে সরকারের অনীহার কথা কূটনৈতিক চ্যানেলে জাতিসংঘসহ সবাইকে বলা হয়েছে। তারপরও চাপ থামছে না।