স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের চোখের পানি আড়াল করতে পারলেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।
নিজের প্রতি করা বর্ণবাদের বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখের পানি আটকাতে পারলেন না এই ফুটবলার। কেঁদে কেঁদে শুধু বললেন, ‘আমি ফুটবলটা খেলতে চাই। আর কিছুই না।’
যেভাবে একের পর এক প্রতিটি ম্যাচে বর্ণবাদের শিকার হন রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা, তাতে করে তিনি স্বীকার করেছেন, ‘খেলার ইচ্ছাটাই কমে যায়।’ একই সঙ্গে এটাও জানিয়ে দিয়েছেন, চরম বর্ণবাদী আচরণের শিকার হলেও তিনি স্প্যানিশ লা লিগা ছেড়ে যাবেন না।
৫ বছর আগে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। লজ ব্লাঙ্কোজদের জার্সি গায়ে তোলার পর থেকে দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছেন তিনি। রিয়ালের একজন মূল খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা। একই সঙ্গে প্রথম থেকেই প্রতিপক্ষের দর্শক-সমর্থকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বর্ণবাদী আচরণের শিকার হচ্ছেন তিনি। তাকে প্রায় গ্যালারি থেকে শুনতে হয়, ‘ভিনিসিয়ুস তুমি মরে যাও।’
সংবাদ সম্মেলনে এসে বর্ণবাদী আচরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বেশ আবেগি হয়ে পড়েন। ভিনিসিয়ুস বলেন, ‘আমি এ ধরনের বাজে মন্তব্য দীর্ঘ সময় ধরে শুনে এবং দেখে আসছি। এতে করে আমি মনে অনেক অনেক বেশি দুঃখ পাই। যে কারণে আমার মধ্যে খেলার প্রতিও অনেক বেশি অনীহা তৈরি হয়।’
ভিনিসিয়ুস আরো বলেন, ‘আমার প্রতি যখন অভিযোগ তোলা হয়, বাজে আচরণ করা হয়, প্রতিটি আচরণেই আমি খুব কষ্ট পাই। কিন্তু তবুও আমাকে হাজির হতে হয় এবং মুখ দেখাতে হয়।’
ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাগুলোর কাছে সাহায্য চেয়েছেন উল্লেখ করে ভিনিসিয়ুস বলেন, ‘আমি উয়েফা, ফিফা, কনমেবল (লাতিন আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন) এবং সিবিএফ (ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন) - এর কাছে সাহায্য চেয়েছি। তারা আমাদে সহযোগিতা করছেন এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। কিন্তু সমস্যা হলো স্পেনে। এখানে বর্ণবাদী আচরণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।’
স্পেনের বিপক্ষে ব্রাজিল আজ রাতেই আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে খেলতে নামছে। ম্যাচটি দুই ফুটবল ফেডারেশন মিলে আয়োজন করেছে, বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যকে সামনে রেখে। সেখানেই কথা বলতে আসেন বর্ণবাদী আচরণের সবচেয়ে বেশি শিকার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।
ভিনিসিয়ুস বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, স্পেন কোনো বর্ণবাদী রাষ্ট্র নয়। কিন্তু এখানে অনেক বর্ণবাদী রয়েছেন এবং যাদের অধিকাংশই স্টেডিয়ামে হাজির হন। আমাদেরকে পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, বর্ণবাদী আচরণ যারা করে, তাদের অনেকেই জানে না বর্ণবাদ বা রেসিজম কী? আমার এই ২৩ বছর বয়সে স্প্যানিশদের শেখাতে চাই, আসলে বর্ণবাদটা কী?’
বর্ণবাদের বিপক্ষে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় কণ্ঠস্বরই এখন ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের। গত বছরই ব্রাজিলে ‘ভিনিসিয়ুস জুনিয়র আইন’ পাশ করা হয়েছে, বর্ণবাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য।
তিনি বলেন, ‘ফুটবল খেলা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বর্ণবাদের বিপক্ষে লড়াই করাটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে বর্ণেরই মানুষ হোক না কেন, সবারই একটা স্বাভাবিক জীবন আছে। যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে আমি আমার ক্লাবে চলে যাই এবং খেলায় মনোযোগ দিই। একটি বিষয় আমি চিন্তা করি যে, আমাকে খেলা চালিয়ে যেতে হবে। এটা সবার জন্যই। কারণ সবারই স্বাভাবিক একটা জীবন আছে।’