‘ভুল চিকিৎসায়’ বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থপতি রাজীব আহমেদের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ওই স্থপতির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তার পরিবারের সদস্য ও স্থপতিদের।
এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এর সাথে একত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক বিচারের দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
রাজীব আহমেদ দুই কন্যা সন্তানের জনক। তাদের একজনের বয়স ৮ বছর এবং অপরজনের এক বছর চার মাস। তার স্ত্রী সারাওয়াত ইকবালও একজন স্থপতি।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে ‘ভুল চিকিৎসায়’ স্থপতি রাজীব আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে পরিবার ও স্থপতিদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্থপতি রাজীব আহমেদ, বুয়েট ২০০৩ ব্যাচের সদস্য ও রুফ লাইনার স্টুডিও অব আর্কিটেকচারের অন্যতম প্রধান স্থপতি। তিনি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রাজীবের মৃত্যুতে তার পরিবার বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে তার প্রেসক্রিপশন ও হাসপাতালের রেকর্ড নিয়ে কয়েক দফা আলোচনায় বসেছে। এতে তার চিকিৎসায় ভুল চিকিৎসার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চিকিৎসার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, হাসপাতালের আইসিইউ থেকে দেয়া প্রাত্যহিক রিপোর্টগুলোতে দেখা যায় রাজীবের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় 'Fulminant hepatic failure (Drug Induced), Hepatic encephalopathy leading to septacemia, septic shock, Acute kidney injury, DIC, ARDS’ তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
কিন্তু বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে জানা যায়, শমরিতা হাসপাতালে অন্যতম পরিচালক ডা. এম ইউ কবির চৌধুরীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একই সময়ে সেবন করা দুইটি মেডিসিন 'Methotrexate' ও ’Acitretin’-এর মিথস্ক্রিয়া (Drug interaction) তার এই Fulminant liver failure-এর মূল কারণ। যা সকল স্বীকৃত ওষুধ সংস্থার গাইডলাইনে সুস্পষ্টভাবে contraindicated বলা আছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত দেড় বছর ধরে রাজীব চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরীর অধীনে চিকিৎসাধীন ছিল। নতুন ওষুধ সেবন শুরুর করার ৯ দিনের মাথায় প্রচণ্ড পেটব্যথা নিয়ে রাজীব ডা. কবীর চৌধুরীর নির্দেশে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন।
কিন্তু সেখানে অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় এক দিন পর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শমরিতায় শিরাপথে দুইটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্কয়ারে আটটি অ্যান্টিবায়োটিকসহ সর্বমোট ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়।
‘ভুল চিকিৎসায়’ স্থপতি রাজীব আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে পরিবার ও স্থপতিদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেয়া
হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করে পরিবার জানায়, উভয় হাসপাতালেই চিকিৎসা চলাকালীন অব্যবস্থাপনা ছিল। বিশেষত শমরিতায় লিভার এনজাইমগুলোর মাত্রা অনেক বেশি থাকার পরও তারা লিভার ফেইলিউরের ডায়াগনোসিসকে আড়াল করে অন্য ডায়াগনসিস উল্লেখ করে। স্কয়ার হাসপাতালে শুক্রবার রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ার পরেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিদর্শনে আসেননি, বা কোনো সুনির্দিষ্ট ডায়াগনসিস না করে কালক্ষেপণ করা হয়।
অথচ রাজীব তখন লিভার ফেইলিউর থেকে একে একে অন্যান্য অর্গান ফেইল্যুরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং তিলেতিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। অথচ এসন অবস্থার কথা কেবিনে থাকা অবস্থায় চিকিৎসকরা তার পরিবারকে জানায়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযাগ করেন রাজিবের বোন।
তিনি বলেন, আইসিইউতে নেয়ার পর তাকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা ‘নট ফিট টু ফ্লাই’ ঘোষণা করে। এই কালক্ষেপণ, সঠিক ও সময়োচিত ব্রিফিংয়ের অভাব রাজীবকে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে যায়! সময় মতো চিকিৎসকরা রাজীবের অসুস্থতার তীব্রতা সম্পর্কে অবহিত করলে আমরা তাকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারতাম। কারণ আমাদের দেশে লিভার ডায়ালাইসিসের কোনো সুবিধা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আরিফ উদ্দিন চিকিৎসার বিস্তারিত তুলে ধরেন। একই সঙ্গে কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের অবেহেলার সবিস্তারে ব্যাখ্যা দেন।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি মাহমুদুল ইসলাম জগলুল বলেন, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট একটি প্রফেশনাল বডি হিসেবে আশাকরে বিএমডিসি এর সুবিচার করবেন। যদি তা না করা হয় আমরা প্রয়োজনে পথে নেমে আসব। আমরা বিএমডিসি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি আশা থাকবে তারা সুবিচার করবেন। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচির দিকে যাব।