‘বড়দের অনুকরণ করতে পারা দারুণ হবে’, টসের সময় বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক হিউ ওয়াইবগিন। সেটিই করে দেখালেন তিনি ও তার দল। গত বছর ভারতকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপা ঘরে তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দল। এর আগে একই দলের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জিতেছিল তারা।
এর আগে সবশেষ ২০১০ সালে যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর ২০১২ ও ২০১৮ আসরে ফাইনালে হারে তারা, দুইবারই প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। এশিয়ার দলটিকে হারিয়ে সেই ক্ষতে প্রলেপ দিল তাসমান সাগর পাড়ের দলটি।
ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত অবদানে লড়ার মতো পুঁজি গড়ে অস্ট্রেলিয়া। সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন হারজাস সিং। চল্লিশ ছাড়ানো ইনিংস খেলেন হ্যারি ডিক্সন, ওয়াইবগিন ও অলিভার পিক।
বল হাতে নিজেকে মেলে ধরে ফাইনালের সেরার পুরস্কার জিতে নেন মাহলি বিয়ার্ডম্যান। স্রেফ ১৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন এই পেসার। অফ স্পিনার র্যাফ ম্যাকমিলানের প্রাপ্তিও তিনটি। ক্যালাম ভাইডলার ধরেন দুই শিকার।
শেষের মতো শুরুটা মধুর ছিল না অস্ট্রেলিয়ার। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় তারা। সেই ধাক্কা সামাল দেন ডিক্সন ও ওয়াইবগিন। ৭৮ রানের জুটিতে দলকে কক্ষপথে রাখেন এই দুইজন।
নিজের টানা দুই ওভারে থিতু দুই ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেন নামান তিওয়ারি। ৫ চারে ৪৮ রান করেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ওয়াইবগিন। এক ছক্কা ও ৩ চারে ৪২ রান আসে ডিক্সনের ব্যাট থেকে।
রায়ান হিকস ও হারজাস মিলে অস্ট্রেলিয়াকে উপহার দেন আরেকটি পঞ্চাশোর্ধ জুটি। হিকসকে এলবিডব্লিউ করে ৬৬ রানের জুটি ভাঙেন রাজ লিমবানি। কয়েক ওভার পর থামে হারজাসের তিনটি করে ছক্কা ও চারে গড়া পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস।
এরপর এক প্রান্তে চমৎকার ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখেন পিক। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলের রান আড়াইশ পার করেন তিনি। ১ ছক্কা ও ২ চারে ৪৩ বলে ৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন পিক।
রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ভারতের ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো দলটি কখনোই জাগাতে পারেনি জয়ের সম্ভাবনা। তাদের ইনিংসে ফিফটি নেই একটিও। পঞ্চাশ ছুঁতে পারেনি একটি জুটিও।
তৃতীয় ওভারেই আর্শিন কুলকার্নিকে হারায় ভারত। এরপর কিছুক্ষণ চেষ্টা চালান আদার্শ সিং ও মুশির খান। বিয়ার্ডম্যানের নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে মুশির বোল্ড হলে ভাঙে তাদের ৩৭ রানের জুটি।
এরপর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে ভারত। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা উদয় সাহারানকে এদিন টিকতে দেননি বিয়ার্ডম্যান। সাচিন দাস ও আরাভেলি আভানিশকে দ্রুত ফেরান ম্যাকমিলান। প্রিয়ানশু মলিয়াও পারেননি কিছু করতে।
৯১ রানে ৬ উইকেট হারানো দলের এক প্রান্ত আগলে রাখেন আদার্শ। ১ ছক্কা ও ৪টি চারে ৭৭ বলে ৪৭ রান করা এই ওপেনার বিয়ার্ডম্যানের শিকার। শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া অপেক্ষা বাড়ান মুরুগান আভিশেক ও নামান। নবম উইকেটে দুইজনে গড়েন ৪৬ রানের জুটি।
মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন ভাইডলার। তার বলে পয়েন্টে নামানের ক্যাচ ছাড়ার পরের ডেলিভারিতেই একই জায়গা মুরুগানের ক্যাচ মুঠোয় জমান ওয়াইবগিন। ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৪৬ বলে ৪২ রান করেন মুরুগান। কয়েক ওভার পর শেষ উইকেটটি তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বাঁধনহারা উল্লাসে মাতান স্ট্র্যাকার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৫৩/৭ (ডিক্সন ৪২, কন্সটাস ০, ওয়াইবগিন ৪৮, হারজাস ৫৫, হিকস ২০, পিক ৪৬*, ম্যাকমিলান ২, অ্যান্ডারসন ১৩, স্ট্র্যাকার ৮*; রাজ ১০-০-৩৮-৩, নামান ৯-০-৬৩-২, সৌমি ১০-০-৪১-১, মুশির ৯-০-৪৬-১, মুরুগান ১০-০-৩৭-০, প্রিয়ানশু ২-০-১৭-০)
ভারত: ৪৩.৫ ওভারে ১৭৪ (আদার্শ ৪৭, আর্শিন ৩, মুশির ২২, সাহারান ৮, সাচিন ৯, প্রিয়ানশু ৯, আরাভেলি ০, মুরুগান ৪২, রাজ ০, নামান ১৪*, সৌমি ২; ভাইডলার ১০-২-৩৫-২, অ্যান্ডারসন ৯-০-৪২-১, স্ট্র্যাকার ৭.৫-১-৩২-১, বিয়ার্ডম্যান ৭-২-১৫-৩, ম্যাকমিলান ১০-০-৪৩-৩)
ফল: অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৭৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ফাইনাল: মাহলি বিয়ার্ডম্যান
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: কিউনা মাফাকা