রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজ সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের আসনে জাতীয় পার্টিই বসবে। আর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা স্বতন্ত্রই থাকবেন।
বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সব দলকেই তো মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের দল, তারা তো স্বাধীনতার বিপক্ষে। যে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না, সে স্বাধীনতায়ও বিশ্বাস করে না। কাজেই ওই রকম বিরোধিতা আমরা চাই না। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে সংসদে বিকৃতি করবে, এমন আমরা প্রত্যাশা করি না।’
সরকারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার অঙ্গীকারের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব মন্ত্রণালয়কে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এটা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এটা তো এক–দুই দিনের ব্যাপার নয়। খুব দ্রুত এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সবাই দেখতে পাবেন।’
বিএনপির কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা সবকিছু হারিয়ে এখন দুঃখসাগরে নিমজ্জিত। নির্বাচনে হেরে গেছে, আন্দোলনে হেরে গেছে, নির্বাচন বর্জন করেছে। আমি শুধু বলব, কালো পতাকা মিছিলের সঙ্গে কালো ব্যাজটাও ধারণ করতে। তাহলে ষোলো আনা পূর্ণ হয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, তারা (বিএনপি) বিভিন্নভাবে সরকারবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। দেশে–বিদেশে গুজব ছড়াচ্ছে। তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে গুজবসন্ত্রাস। দেশে-বিদেশে তারা সরকারের বিরুদ্ধে গুজব চালাচ্ছে।
সরকার সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কচুপাতার পানি যেমন, টাক (ধাক্কা) লাগলে পড়ে যাবে—তেমন সরকার নয়। এই সরকারের শিকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে। এ সরকারের শক্তির উৎস বাংলাদেশের জনগণ। কথার বোমা মেরে এই সরকারকে উৎখাত করা যাবে না।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চাইতে পারে কোনো অসুবিধা নেই। তাদের দলের নেত্রীর মুক্তি তো তারা চাইবেই।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্দোলনে বোঝা গেছে, তারা দুর্বল। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে অংশ নেয়নি। সেখানে তাদের অবস্থান পরিষ্কার। তারপর নির্বাচন জনগণকে দিয়ে তারা বর্জন করাবে, সেখানেও তারা ব্যর্থ।’ সরকারের যেকোনো সময় পতন হবে, বিএনপির এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা যত পতন বলবে, সরকারের তত উত্থান হবে।’
রাজনীতিতে বিএনপিকে মিস করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাদের গঠনমূলক সমালোচনায় যেটার হেল্প করেছে, সেটা হলো—তারা কিন্তু বড় বড় সমাবেশ করেছে, মিছিল করেছে, তাদেরকে আমি দুর্বল বলে উড়িয়ে দিতে চাই না। আন্দোলনের ব্যাপারে তারা সাবজেক্টিভ প্রস্তুতি গড়ে তুলতে পারেনি। তারা আগুনসন্ত্রাসের মতো জঘন্য সন্ত্রাসী পথ বেছে নিয়েছে সরকার পতনের জন্য। তারা কতগুলো ট্র্যাজিক ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে সরকারের কোনো লাভ হয়নি। তাদের কী লাভ হয়েছে, জানি না, তারাই জানে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে অনেক কিছু ওপেন করে দেওয়ার পরও নৌকার জনপ্রিয়তা নৌকার জায়গায় রয়েছে। নির্বাচনের ২২৩টি আসন নৌকা পেয়েছে, তাহলে কীভাবে আপনি মনে করেন, নৌকার জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনমতের প্রতিফলন ২২৩ সিটে নৌকার জয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সংঘাত–সহিংসতা আমাদের দেশে হয়। কখনো বেশি, কখনো কম। এবার নির্বাচনে খুব কি রক্তক্ষয় ঘটনা ঘটেছে? কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, পারভীন জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।