প্রকাশ: সোমবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: সোমবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৪, ১১:২২ অপরাহ্ন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থন পাওয়া দুই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হেরে গেছেন। তাঁরা হলেন গাজীপুর-১ আসনে রেজাউল করিম রাসেল ও গাজীপুর-২ আসনের প্রার্থী কাজী আলীম উদ্দিন বুদ্দিন। তবে গাজীপুর-৫ আসনে জাহাঙ্গীর সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান প্রায় ১৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার কোনো পরাজয় হয়নি, দুই মন্ত্রীর ভোট কমেছে। আমি ৮ লাখ আওয়ামী লীগের পক্ষে আর মন্ত্রীরা ২ লাখ আওয়ামী লীগের লোক। কারণ ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ছিল ৮ লাখ আর এখন ২ লাখ। তাঁরা আওয়ামী লীগকে দুর্বল করেছে। দুই মন্ত্রীর বোঝা উচিত ছিল আওয়ামী লীগের লোকজন ২ লাখ ভোট তাদের বিপক্ষে দিয়েছে। ২০১৮ সালের ভোটে আ ক ম মোজাম্মেল পাইছিল প্রায় ৪ লাখ ভোট। এবছর পাইছে ১ লাখ ভোট। তাহলে ৩ লাখ আওয়ামী লীগের ভোট তাঁর থেকে সরে গেছে। জাহিদ আহসান রাসেল পাইছিল পৌনে ৫ লাখ ভোট। এবার ৩ লাখ ভোট ছুইটা গেছে। তারমানে দেখেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর ভোট আওয়ামী লীগ থেকে ছুটে গেছে।’
জাহাঙ্গীর আলম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে প্রথমে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারান। পরে মেয়র পদও হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর দল তাঁকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় নেয়। পরবর্তীতে গত বছরের ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। খেলাপি ঋণ থাকার কারণে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। আপিল করেও মনোনয়ন ফিরে না পাওয়ায় তিনি মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনী মাঠে থাকায় তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। নিজের মনোনয়ন বাতিল, দলীয় পরিচয় হারানোর পরও মাকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে দৃঢ় অবস্থান নেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই নির্বাচনে তাঁর মা মেয়র হিসেবে জয়ী হন। এরপর জাহাঙ্গীরকে আবারও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনে।
তবে জাহাঙ্গীর আলম তাঁর বরখাস্তের পেছনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের হাত ছিল বলে বিভিন্ন সময়ে দাবি করেন। এ কারণে তিনি এবার সংসদ নির্বাচনে নিজে প্রার্থী না হয়ে গাজীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল, গাজীপুর- ২ আসনের কাজী আলীম উদ্দিন বুদ্দিন ও ৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামানকে সমর্থন দেন। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে তিনজন প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক প্রচার প্রচার চালান। কোথাও কোথাও প্রার্থীদের চেয়ে তাঁর ভূমিকা ছিল স্বতঃর্স্ফূত। ব্যাপক সাড়াও ফেলেছিলেন। তাঁর কারণে নৌকার প্রার্থী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিও এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিলেন। প্রচারের সময় একে অপরের সঙ্গে তুমুল বাকযুদ্ধ, আলোচনা–সমালোচনায় মেতে ছিলেন।
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গাজীপুরের ৫টি আসনের ৪টিতেই জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। ১টি আসনে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
তবে গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত মো. আখতারউজ্জামানের কর্মী সমর্থকরা দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থনে নয়, আখতারউজ্জামান তাঁর অতীত কর্মজীবন ও ব্যক্তি ইমেজের কারণে জয়ী হয়েছেন।
ফলাফল অনুয়ায়ী, গাজীপুর ১ আসনের বিজয়ী হয়েছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি পেয়েছেন এক লাখ ৯ হাজার ২১৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিম রাসেল স্বতন্ত্র ৯২ হাজার ৭৮৮ ভোট পেয়েছেন। গাজীপুর-২ আসনে বিজয়ী জাহিদ আহসান রাসেল পেয়েছেন এক লাখ চার হাজার ৪৭৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলিম উদ্দিন পেয়েছেন ৮৪ হাজার ১২৯ ভোট। গাজীপুর–৫ আসনের বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান। তিনি পেয়েছেন ৮২ হাজার ৭২০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৭৮৩ ভোট।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি চারটি আসনের প্রার্থীর পক্ষে ছিলাম। সেখানে দুইজন প্রার্থী হেরেছে কিন্তু অন্য দুইজন জিতেছে। আমি সিমিন হোসেন রিমির পক্ষেও ছিলাম। শুধু বুদ্দিন আর রাসেল হারছে। যখন তাঁরা এমপি ছিলেন তখন তাদের ভোট ছিল। মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁদের ভোট কমছে। তারমানে এলাকায় সুশাসন দেয়নি, নেতাদের মূল্যায়ন করেনি। ক্ষমতায় থাকার পর ভোট কমে কীভাবে? আমি এটা প্রমাণের জন্য ভোটে স্বতন্ত্রদের সাপোর্ট দিয়েছি। আওয়ামী আওয়ামী লীগ করে আসছি। দুঃসময়ের আওয়ামী লীগ।’