বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ৮ কার্তিক ১৪৩১
 

‘নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে’    গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগে বনশ্রীতে বাড়িতে আগুন    ২০২৩ সালে দেশে এইডসে ২৬৬ জনের মৃত্যু     নিউজিল্যান্ডে আরেকটি ঐতিহাসিক জয় টাগইগারদের     নির্বাচন বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আহ্বান ওবায়দুল কাদেরের    হবিগঞ্জের ডিসি ও তিন ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ ইসির    ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়: ডিএমপি কমিশনার   
আমাদের দেশে কেন নির্বাচনী বিতর্ক হয় না?
প্রকাশ: সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩, ৬:৪৯ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন চলাকালীন অন্যতম এবং বলা যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হলো ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট’ বা নির্বাচনী বিতর্ক। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু নিজেদের বিশ্বের অন্যতম গণতন্ত্র চর্চার দেশ হিসেবে দাবি করে আসছে, সেহেতু তাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে হলেও বিতর্কটির আয়োজন করতেই হয়।

বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ; উভয় প্রেক্ষাপট থেকেই এমন একটি উন্মুক্ত আলোচনার ক্ষেত্র বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে জনগণের এমন সক্রিয় অংশগ্রহণ তাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে মানসিকভাবে অনেকটা প্রস্তুত করে তুলতে পারে। একজন সাধারণ মানুষ তখন রাষ্ট্রের কোনো সিদ্ধান্তের সক্রিয় অংশ হওয়ায় গর্ব করতে পারে! বাস্তবিক অর্থেই প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে হলে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক।

মজার ব্যাপার হলো, প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে মিথ্যাচার করার তেমন সুযোগ নেই। করলেও তা ধরা পড়ে যায়। এমনকি প্রার্থী কতটি মিথ্যা বা বানোয়াট তথ্য দিয়েছে, কেন দিয়েছে; তাও প্রকাশ্যে আসে। আধুনিক যুগে মিথ্যাচার করে পার পেয়ে যাওয়া মুশকিলের ব্যাপার। যদিও বাংলাদেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তি অনেকেই অনেক রকম কথা বলে, লোক হাসায়; এমনকি নিজেরাও হাসে। শুধু বুঝতে পারে না, তাকে নিয়েই হাসাহাসি হচ্ছে। আবার বুঝতে পারলেও সেদিকে খুব একটা নজর দেওয়ার অভ্যাস তাদের তৈরি হয়নি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কথাই বলা যাক, সাধারণ মানুষ বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে; অথচ তথাকথিত দায়িত্বশীল মানুষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে বলছেন, দেশে কোনো সমস্যা নেই। মানুষ সুখে আছে! 

অনেক ঘটনায় সমালোচনার মুখে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ লজ্জায় মাথা নিচু করে পদত্যাগ পর্যন্ত করেন। শুধু বাংলাদেশে এর চিত্র ভিন্ন। তথাকথিত দায়িত্বশীল সেই ব্যক্তিরা আরও শক্তপোক্ত হয়ে চেয়ারে আরাম করে বসেন, যেন কেউ তাদের নাড়াতেও না পারে। আর যা-ই হয়ে যাক, চেয়ার ছাড়া যাবে না। কোনো এক অজানা কারণে বাঙালির মধ্যে ক্ষমতা পাওয়া এবং পাওয়ামাত্রই তাকে যে কোনো মূল্যে আঁকড়ে ধরে থাকার একটি মানসিকতা কীভাবে যেন তৈরি হয়ে গেছে! 

আমেরিকায় অবশ্য এমন মানসিকতা দেখানোর সুযোগ কম। একেবারেই যে নেই, তা নয়। আছে; তবে বিপদও আছে। সাধারণ মানুষ খুব শক্তভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানায়। হোয়াইট হাউসের সামনে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড উত্তোলন করে প্রতিবাদ করে। নির্বাচনে তার জটিল প্রভাব পড়ে। অতএব, কোনো প্রার্থীই চান না নির্বাচনে তাঁর বেখেয়ালি কথার প্রভাব পড়ুক। ট্রাম্প অবশ্য তাঁর সময়ে বেশ বেখেয়ালি কথাবার্তা বলেছেন এবং বিতর্কিতও হয়েছেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে তার স্পষ্ট ফল দেখা গেছে। একুশের নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলেন। বাইডেন ক্ষমতায় এলেন। তিনি নিঃসন্দেহে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। কিন্তু একজন প্রবীণ নেতা হিসেবে বাইডেনের কাছে বিশ্ব-রাজনীতি যেমনটা আশা করেছিল, তেমনভাবে তিনি প্রতিদান দিতে পারেননি। মানুষ আশাহত। এর কারণ খুবই স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ধাক্কা তিনি সামলাতে পারেননি। রাশিয়া-ইউক্রেনের সংকটকে থামাতে তো পারেনইনি; এর মধ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের চলমান চরম সংকট সমাধানেও তিনি কিছু করতে পারছেন না; বরং আরও বিতর্কিত হচ্ছেন। ইসরায়েলের বিধ্বংসী আচরণকে সমর্থন করে অস্ত্র পাঠাচ্ছেন। এগুলো বলার কারণ হলো, সামনের বছরের নির্বাচনী বিতর্কে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে এসব ঘটনার জবাবদিহি করতে হবে। যদি তিনি নির্বাচনে আসেন এবং একইভাবে নির্বাচনী বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তিনি অবশ্যই প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। আমরা কেউ জানি না, তিনি কী উত্তর দেবেন। তবে জবাব তিনি কী দেবেন বা কীভাবে দেবেন; না জানলেও এতটুকু নিশ্চিত– তাঁকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।

বিশ্বের বড় দেশগুলোতে সমালোচনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ করেন চেয়ারে থাকা মানুষ। কারণ, সমালোচনা থেকে নতুন করে ভালো কিছুর সূচনা হতে পারে। সমালোচনাকে গ্রহণ করার মানসিকতা বা শক্তি কোনোটাই আমাদের নেই বা তৈরি হয়নি। তৈরি করার ইচ্ছাশক্তিও নেই আমাদের। সমালোচনার জবাব কীভাবে দিতে হয়, আমরা তা-ও জানি না অনেকাংশে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বুদ্ধিমান দেশগুলো পেশিশক্তি প্রদর্শন করে না। তারা বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক, সামরিক ও সামাজিক শক্তি। আমাদের দেশেও একটি মুক্ত জবাবদিহির উন্মুক্ত আয়োজন প্রয়োজন, যেখানে মানুষ তাদের প্রতিনিধিদের নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করতে পারবে এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য থাকবেন।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft