প্রকাশ: রোববার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:২০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: রোববার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:২৫ অপরাহ্ন

অভিভাবক বলতে সে ব্যক্তিকে বুঝায় যার নিকট কোন নাবালক/নাবালিকার শরীর/সম্পত্তি বা উভয়ের তত্ত্বাবধান রয়েছে এবং প্রতিপাল্য বলতে তাকে বুঝায় যার শরীর/'সম্পত্তি বা উভয়ের জন্য অভিভাবক/অভিভাবিকা রয়েছে।
সাধারণত অভিভাবকত্ব নাবালক/ নাবালিকার শরীর, সম্পত্তি ও বিয়ের ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়।মুসলিম আইনে ১৫ বছরে পদার্পন করেনি এমন কোন নাবালক/ নাবালিকাকে বুঝালেও অন্যান্য আইনে নাবালক/নাবালিকা বলতে যার বয়স ১৮ বছর পূর্ন হয়নি এমন কাউকে বুঝায়। উল্লেখ্য কোন নাবালক/নাবালিকার শরীর ও সম্পত্তির বিষয়ে অভিভাবক/অভিভাবিকা নিযুক্ত হয়ে থাকলে তার বয়স ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নাবালক বা নাবালিকা হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রথমতঃ নাবালক/নাবালিকার শরীরঃ মুসলিম আইনে পুত্র সন্তানের বয়স ৭(সাত) বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এবং কন্যা সন্তানের বয়ঃসন্ধি বা পূর্ণ যৌবনা প্রাপ্তা না হওয়া পর্যন্ত "মা" তার হেফাজতে রাখার অধিকারীনি হলেও তিনি স্বাভাবিক ও আইনানুগ অভিভাবিকা নন।পিতা বা দাদা বা তাদের নিযুক্তীয় নির্বাহকই বৈধ ও আইনানুগ অভিভাবক। মায়ের মৃত্যুর পরে বা কোন যৌক্তিক কারনে "মা" এ অধিকার হারালে নাবালক/নাবালিকার নানী, দাদী,আপন বোন সহ অন্যান্য নিকটতম আত্মীয়ের মহিলার উপর অভিভাবকত্বের দায়িত্ব বর্তায়।অন্যদিকে মা সহ অন্যান্য নিকটতম আত্মীয়ের মহিলারা বিভিন্ন কারণে হেফাজতের বা অভিভাবিকার দায়িত্ব হারান।যেমন; নাবালকের সাথে সম্বন্ধযুক্ত নয় এমন কোন নিষিদ্ধ ধাপের কাউকে বিয়ে করলে, মাতা-পিতার বাসস্থান হতে অন্যত্রে চলে গেলে, অনৈতিক জীবনে জড়িয়ে পড়লে ,নাবালক/ নাবালিকাকে সঠিক পরিচর্চা না করলে, অন্য ধর্ম গ্রহন করলে, পিতাকে নাবালক/নাবালিকার কাছে যেতে বাধা দিলে।অন্যদিকে পুত্র সন্তানের বয়স ৭ বছর এবং কন্যা সন্তানের বয়োঃপ্রাপ্তির পর পিতার হেফাজতের অধিকার সৃষ্টি হয়।পিতার অবর্তমানে দাদা এবং তাদের অবর্তমানে অন্যান্য নিকটতম আত্মীয়ের পুরুষগনের উপর এ অধিকার বর্তায়। এ ক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে কোন পুরুষই অবিবাহিত বালিকার হেফাজতের অধিকারী হবেন না, যদি না, সে ঐ বালিকার সহিত মুসলিম আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ ধাপের আত্মীয় সম্পর্কের হয়।উল্লেখ্য "মা" বা অন্যান্য নিকটতম আত্মীয়ের মহিলারা যে কারনে হেফাজতের/অভিভাবিকার দায়িত্ব হারান, প্রায়ই একই কারনে পিতা ও অন্যান্য নিকটতম আত্মীয়ের পুরুষগনও হেফাজতের/অভিভাবকের দায়িত্ব হারান।পিতা বা নিকটতম পুরুষ আত্মীয়গনের অবর্তমানে অভিভাবক/ অভিভাবকা নিয়োগের দায়িত্ব আদালতের উপর বর্তায়।এ ছাড়াও নাবালিকা স্ত্রীর অভিভাবিকা হিসেবে উপযুক্ত হলেন তার মা।
দ্বিতীয়তঃ নাবালক/নাবালিকার সম্পত্তিঃ সম্পত্তির ক্ষেত্রে নাবালক/নাবালিকার পিতা ও দাদা বৈধ ও আইনগত অভিভাবক এবং তাদের অবর্তমানে তাদের নিযুক্তীয় ব্যক্তিও অভিভাবক নিযুক্ত হতে পারেন।এ ধরনের অভিভাবক যৌক্তিক কারনে নাবালক/নাবালিকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আদালতের অনুমতি ছাড়াই হস্তান্তর করতে পারেন।।বৈধ ও আইনগত অভিভাবকের অবর্তমানে নাবালক/নাবালিকার মঙ্গলার্থে আদালত নাবালক/নাবালিকার পিতৃকুল বা মাতৃকুলের পক্ষ থেকে যে কাউকে সম্পত্তির জন্য অভিভাবক নিযুক্ত করতে পারেন এবং এ ধরনের অভিভাবক বৈধ কারনে নাবালক নাবালিকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তররে ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি ছাড়া করতে পারবেন ন।অন্যদিকে অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে একজন অভিভাবক তার নিজের সম্পত্তি যে ভাবে দেখা-শুনা করেন, ঠিক অনুরূপ ভাবে নাবালক/নাবালিকার সম্পত্তিও দেখা শুনা করবেন।
তাছাড়া আইনগত অভিভাবক না হওয়া সত্তেও কখনও কখনও কেউ স্বেচ্ছায় নাবালক/ নাবালিকার শরীর ও সম্পত্তির হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহন করেন,তাকে বাস্তবিক বা কার্যত অভিভাবক বলা হয়।এ ধরনের অভিভাবকেরও নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষমতা নেই এবং অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিভাবকের ক্ষমতা আইনানুগ অভিভাবকের ক্ষমতার সমান।
তৃতীয়তঃ নাবালক/ নাবালিকার বিয়েঃ নাবালক/ নাবালিকার বিয়ের ক্ষেত্রেও পিতা, দাদা যতই উর্ধ্বগামী হোক তাদের উপর বর্তায়। এদের অবর্তমানে মা সহ মাতৃকুলের জ্ঞাতীগনের উপর বর্তায়।যদিও বর্তমানে প্রচলিত আইনে নাবালক/নাবালিকার বিয়ে আইনগতভাবে দন্ডনীয় অপরাধ।
নাবালক/ নাবালিকার শরীর ও সম্পত্তির জন্য যে কোন ব্যক্তি যৌক্তিক কারনে অভিভাবক/ অভিভাবিকা নিযুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে পারেন।আবেদনকারীর/আবেদনকারিনীর অভিভাবক/ অভিভাবিকা হিসেবে দায়িত্ব পালনের দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতা, চরিত্র ও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য, আর্থিক অবস্থা এবং নাবালক/ নাবালিকার সার্বিক মঙ্গল সহ উল্লেখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা করে আদালত নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক নিয়োগের আদেশ প্রদান করে থাকেন।
পরিশেষ বলা যায়, কোন নাবালক/ নাবালিকাকে যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই অভিভাক/অভিভাবকার ভূমিকা অপরিসীম।
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট