যে দিকেই তাকাই শুধু হলুদের সমারোহ। এ যেন প্রকৃতির হলুদ রঙ্গের গালিচা। সকালের কুয়াশা ভেজা শিশির ও সূর্য উকির দেয়ার সাথে সাথে শুরু হয় মৌমাছির মধুর গুঞ্জন। আনন্দ-উল্লাস বাড়িয়ে দেয় প্রকৃতিপ্রেমীদের। এক ফুল থেকে আরেক ফুলে মধু সংগ্রহের কাজে ছোটাছুটি করছে মৌমাছিরা।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দুর্গাপুর, চাঁদপুর তরগাঁও, বাড়িষাব, রায়েদ, টোক ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরিষার মৌসুমে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সরিষা আবাদের পাশাপাশি মধু সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন মৌ চাষিরা। সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের চোখে মুখে আনন্দের আভা। রোপা আমন কাটার পর বোরো আবাদের মাঝামাঝি সময় করা হয় সরিষার আবাদ। আর এ বছর ভালো ফলন হওয়ায় খুশি এ উপজেলার কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছে কৃষকরা যা দু'বছর আগের তুলনায় তিন গুণ বেশি। সরিষার জাতগুলোর মাঝে বারী-১৪,১৭,১৮,১৯, বিনা-৯, আবাদ হয়েছে। কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল বারী-১৪ জাতের সরিষা বেশি আবাদ করেছেন। বেশি হারে ফলন ছাড়াও বারী-১৪ জাতের সরিষার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি বলে জানা যায়।
এদিকে, শস্যের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত দুর্গাপুরের বাড়ীগাঁও অঞ্চলের এই বিস্তৃত মাঠজুড়ে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা খুবই খুশি। সরিষার পাতা থেকে জৈব সার তৈরি হয় এবং জমির উর্বতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী ফসল ইরি ও বোরো আবাদের সময় সার ও কীটনাশক কম লাগায় সরিষার আবাদ কৃষকের কাছে সমাদৃত। এলাকার উৎপাদিত সরিষার তেল এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে অর্থনৈতিকভাবে বিশেষ অবদান রেখে আসছে।
বাড়ি গাঁও গ্রামের কৃষক আ: বাতেন জানান, এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। আগাম সরিষার বাজারদরও বেশি। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশানুরূপ সরিষার ফলন ঘরে তুলতে পারবেন।
গোসাঁইরগাও গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া জানান, তার কয়েক বিঘা জমিতে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা হওয়ায় কৃষকরা দারুণ খুশি। চলতি মৌসুমে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল না তাই ফলন ভালো হয়েছে। সরিষা ক্ষেতগুলো সাধারণত দেড় মাসের মতো ফুলে ফুলে ভরে থাকে। যতদিন ফুল থাকে, ততদিনই চলে মধু সংগ্রহ। সরিষা চাষ মৌসুমে সর্বোচ্চ তিনবার মধু সংগ্রহ করা হয়।
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক জানান, সরিষা ফসলের আবাদে কৃষি বিভাগ থেকে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকে। এবারে বেশ ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। সরিষা ফসলে সেচ দিয়ে জিপসাম সার ব্যবহার করা হলে ফলন বহুগুন বৃদ্ধি পাবে।