দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মোট ৯৭ প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন। এটা মোট প্রার্থীর ৭৯ শতাংশ। এর মধ্যে পাঁচটি আসনে বিজয়ী প্রার্থী ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারাচ্ছেন। নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, যেসব আসনে মূল প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের শক্ত স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, সেখানে দুই প্রার্থীর জামানত টিকেছে।
চট্টগ্রামে জামানত হারানো প্রার্থীদের মধ্যে আলোচিত জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ। তিনি চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী-পাঁচলাইশ) আসন থেকে মূল প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগ এখানে প্রথমে সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদকে মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু পরে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় নোমান মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালাম ৭৮ হাজার ২৬৬ ভোট নিয়ে জয়লাভ করেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরী। তিনি পান ৪১ হাজার ৫০০ ভোট। সোলায়মান আলম শেঠ ৮ হাজার ২৩৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, মোট প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগের কম ভোট যদি কোনো প্রার্থী পান, তাহলে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। চট্টগ্রামে ৯৫ জনের বেশি প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। হিসাব-নিকাশ চলছে।
গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চট্টগ্রামে মোট বৈধ প্রার্থী ছিলেন ১২৫ জন। কিন্তু নির্বাচনের দিন ভোট শেষ হওয়ার আগে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করেন নির্বাচন কমিশন। মোস্তাফিজের প্রাপ্ত ভোট ৩৫ হাজারের কিছু বেশি। এগুলো বাতিল করা হয়।
এই আসনে মোট ৯ প্রার্থীর সাতজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে ৭ জনের মধ্যে ৫ জন, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে ৮ জনের মধ্যে ৬ জন, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে ৯ জনের মধ্যে ৭ জন, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে ৮ জনের মধ্যে ৬ জন, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ৯ জনের ৭ জন, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে ৭ জনের মধ্যে ৫ জন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ৮ জনের মধ্যে ৬ জন, চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-ডবলমুরিং-খুলশী) আসনে ১০ জনের মধ্যে ৮ জন ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ৭ জনের মধ্যে ৫ জন জামানত হারাচ্ছেন।
বিজয়ী প্রার্থী ছাড়া যেসব আসনে বাকি সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেগুলো হলো চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে ৬ জন, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে ৬ জন, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে ৪ জন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে ৫ জন ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ৬ জনের।
এদিকে চট্টগ্রামের সব কটি আসনে গড়ে ৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-৬ রাউজান আসনে ৭৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। অথচ এই আসনে বিজয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সঙ্গে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না। এখানে মোট প্রার্থী ছিলেন পাঁচজন। বাকি চারজনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এরপর ভোটের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে। এখানেও তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন।
সবচেয়ে কম ২০ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-১১ আসনে। এরপর চট্টগ্রাম-৫ আসনে ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট পড়ে।