বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২৪ পৌষ ১৪৩১
 

ব্যাংকের ১৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপ    জানা গেলো বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান    ভারতকে দেওয়া চিঠির জবাব আমরা এখনো পাইনি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা    নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা    সৌদিতে ভয়াবহ বন্যায় রেড এলার্ট জারি    সাবেক এমপি শফিউল ইসলাম গ্রেপ্তার    লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন খালেদা জিয়া   
পাঠ্যবইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিজয়গাথা, কমেছে ভুল
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: রোববার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ২:২৪ অপরাহ্ন

নতুন বছরের বই মানেই ‘পাতায় পাতায় ভুল’। ভুলে ভরা সেই পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হতো শিক্ষার্থীদের হাতে। সেই খবর ফলাও করে প্রকাশিত হতো খবরের কাগজগুলোতে। এমন চিত্র প্রতি বছর দেখা গেলেও এবারের চিত্র একটু ভিন্ন। ২০২৫ সালে পাঠ্যবইয়ে সেই ভুলের সংখ্যা কমেছে। নতুন বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নানা বিষয়বস্তু। 

বাদ দেওয়া হয়েছে মুজিববন্দনা ও পরিবারকেন্দ্রিক ইতিহাস। নতুন করে জায়গা পেয়েছেন স্বাধীনতা ঘোষক মেজর জিয়াউর রহমানসহ অন্যরা। স্থান পেয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন তথা জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস। বইয়ের মলাটে স্থান পেয়েছে জুলাই বিপ্লবের নানা কাহিনি, ছবি ও কার্টুনসহ নানা বিষয়। নতুন বছরের বইয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা জানান, নতুন বছরের পাঠ্যবই মানেই পাতায় পাতায় ভুল, ফেসবুক থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত চলত বিতর্ক। গত কয়েক বছর ধরে চলা এমন বিতর্ক চলতি বছরে অনেকটা কমানো গেছে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বইয়ের ১৪৭টি ভুল চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ২২টি বইয়ে ৪২১টি ভুল পায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। চলতি বছর এখন পর্যন্ত (৪ জানুয়ারি পর্যন্ত) জুলাই মাসে একজন শহীদের নাম ভুল গেছে বলে তথ্য এসেছে। যদিও সেই ভুল অনলাইনে সংশোধন করা হয়েছে।

নতুন আঙ্গিকে ও নতুন কারিকুলামে বই লেখার কারণে গত তিন বছরে ভুলের পরিমাণ বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির সম্পাদনা শাখার কর্মকর্তারা। 

অন্যদিকে, ২০১২ সালের পুরোনো কারিকুলামে ফিরে যাওয়ায় চলতি বছর ভুল কম হয়েছে। কারণ, এবারের বইগুলো ২০১২ সালের পর কয়েক ধাপে পরিমার্জিত ছিল। তারপরও ২০২৫ সালের শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মূল পাঠ্যবইগুলোর মধ্যে ৬৯১টি বই নতুন করে পরিমার্জন করা হয়েছে। সেখানে বড় ধরনের ভুল ধরা পড়েনি। অধিক সতর্কতার কারণে ভুল কমানো গেছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

তৃতীয় শ্রেণির একটি পাঠ্যবইয়ে ‘আমাদের চার নেতা’ শীর্ষক অধ্যায়ে ছবিসহ চার নেতার বিষয়ে উল্লেখ আছে। তারা হলেন- শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

জুলাই বিপ্লবের পর পাঠ্যবইয়ে অতিরঞ্জিত ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিমার্জন আনা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে এক ব্যক্তি ও তার পরিবারকেন্দ্রিক গল্প। বাদ পড়েছে আরও কয়েকটি গল্প-কবিতা। নতুন করে গল্প-কবিতা সংযোজন করা হয়েছে। ইতিহাসনির্ভর বিষয়বস্তুতেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। এরই মধ্যে ৬৯১টি বইয়ের পরিমাজর্ন সম্পন্ন হয়েছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে ছেড়ে ভারতের পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা স্থান পেয়েছে এবারের নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে। ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ অধ্যায়ে উঠে এসেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য। 

সেখানে বলা হয়েছে, ‘৫ই আগস্ট ২০২৪-৩৬ শে জুলাই। বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার জুলাইতে থেমে গেছে। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা দুনিয়ার মানুষ তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি পেশ করেছে। সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটছে। ঘেরাও করবে গণভবন। মূলোৎপাটন করবে শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ফ্যাসিবাদী শাসককে। কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার উত্তরার পথে মানুষের দেখা মিললো। যাত্রাবাড়ীর দিকে মানুষ জড়ো হতে থাকল ধীরে ধীরে। নামলো মানুষের ঢল। জনতা গণভবনে পৌঁছে যায় দুপুর নাগাদ। পতন অত্যাসন্ন টের পেয়ে স্বৈরাচার সরকার প্রধান পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে।’

এ অধ্যায়ে আরও বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের শুরুতে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সরকার’। উঠে এসেছে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ- মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অবদানের কথাও। সেখানে আরও বলা হয়েছে, ‘সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর আন্দোলন কর্মসূচি গতি হারাতে পারত। কিন্তু বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তখন ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসেন।’

পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ নামে একটি গল্পের শেষে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নাম ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। গল্পে মোট পাঁচজন শহীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবু সাঈদ, মুগ্ধ, নাফিজ, নাহিয়ান ও আনাস। তাদের মধ্যে নাহিয়ান নামে কোনো কোনো শহীদের তথ্য পাওয়া যায়নি।

পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ নামে একটি গল্পের শেষে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নাম ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। গল্পে মোট পাঁচজন শহীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবু সাঈদ, মুগ্ধ, নাফিজ, নাহিয়ান ও আনাস। তাদের মধ্যে নাহিয়ান নামে কোনো কোনো শহীদের তথ্য পাওয়া যায়নি।

এনসিটিবি জানায়, ‍জুলাই বিপ্লবে একজন নারীর নাম যুক্ত করতে চাওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে তারা টঙ্গীর সাহাজউদ্দিন সরকার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাফিসার নাম অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। সাভারে বিক্ষোভ চলাকালীন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের গুলিতে নিহত হন নাফিসা। সেখানে নাফিসার স্থলে নাহিয়ান যুক্ত হয়।

এবার পাঠ্যবইয়ে ইতিহাসের বিতর্ক এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। ইতিহাসে যার যতটুকু অবদান ততটুকু তুলে ধরা হয়েছে। কাউকে খাটো করে অন্যকে বড় করা হয়নি। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন বইয়ে নতুন অধ্যায়, ছবি, গ্রাফিতির মাধ্যমে বিপ্লবের বিভিন্ন চিত্র তুলে আনা হয়েছে যাতে নতুন প্রজন্ম বিষয়টি জানতে পারে।

‘নাহিয়ান নামটি ভুল করে লেখা হয়েছে’ বলে স্বীকার করে তাৎক্ষণিক এনসিটিবি পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সনে নাহিয়ানের স্থলে নাফিসার নাম যুক্ত করা হয়েছে। তবে, যেসব বই ছাপা হয়ে গেছে সেখানে নাহিয়ানের স্থলে নাফিসা পড়াতে সংশোধনী পাঠাবে সংস্থাটি।

তবে, বাদ যায়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা। প্রেসিডেন্ট ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম রাখা হয়েছে। তর্জনী উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেওয়ার ছবিও স্থান পেয়েছে বিভিন্ন অধ্যায়ে। অস্থায়ী সরকারের উপদেষ্টাদের নামও তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। প্রথমে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাম, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ঘটনাবহুল বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ২৫ মার্চের গণহত্যা, স্বাধীনতার ঘোষণা এবং স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রাখা ব্যক্তিদের নামও বিভিন্ন বইয়ের স্থান পেয়েছে। 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: jobabdihimedia@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft