বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট ২০২৫ ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২
 

যাত্রী সঙ্কটে পরিবহন ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত!
প্রকাশ: রোববার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: রোববার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন


শাহ ফতেহ আলী পরিবহন। উত্তরের জেলা নওগাঁ, জয়পুরহাট ও রংপুরে যাত্রী আনা-নেয়া করে পরিবহনটি। প্রতিবছর ঈদের আগে তাদের প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০টি বাস ছেড়ে যায় উত্তরের বিভিন্ন গন্তব্যে। কিন্তু গত শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৫টি ট্রিপ যাওয়ার কথা থাকলেও ছেড়েছিল মাত্র পাঁচটি ট্রিপ। তারপরেও সব আসন পূর্ণ করা যায়নি। অনেক ফাঁকা আসন নিয়েই গন্তব্যে ছেড়ে যায় বাসগুলো। একইচিত্র ছিল গতকাল শনিবারও।

যাত্রী সঙ্কটের এমন চিত্র  তুলে ধরেন শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারম্যান শহীদুল ইসলাম। শুধু শাহ ফতেহ আলী পরিবহনই নয়, গাবতলীর সব পরিবহনের প্রতিটি কাউন্টারের চিত্র এমনই। সব গাড়ি সিট ফাঁকা নিয়েই গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। যাত্রী না থাকায় গাবতলীর প্রতিটি কাউন্টার খা খা করছে। হাকডাঁক করেও যাত্রী পাচ্ছেন না তারা। 

কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারই তাদের প্রথম ঈদ এমন ডাল (মন্দা)। প্রতি ঈদে যাত্রীদের টিকিট দিতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। বাড়তি দামেও টিকিট বিক্রি করেন। কিন্তু দুই দিনে গাবতলী ঘুরে দেখা গেল, আসল দামে কেউ যেতে চান না। দর কষাকষি করছেন অনেক যাত্রী।

শনিবার কাউন্টারে থাকা লোকজন বলছেন, রোববার থেকে অনেকে যাত্রা শুরু করবেন। তা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এই কদিনই তাদের ব্যবসা চাঙ্গা হবে। তবে রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্তও তেমন যাত্রী দেখা যায়নি দেশের প্রধান ও বড় বাস টার্মিনালটিতে। গতরাতে শবে কদর হওয়ায় সকালে যাত্রী কম বলে মনে করছেন বাস সংশ্লিষ্টরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আজ যাত্রী বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

শাহ ফতেহ আলী পরিবহনে প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করেন শহীদুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলায়। শহীদুলের অভিজ্ঞতায় এটি প্রথম ঈদ, যেখানে ঈদের আগের দুই দিন হাকডাঁক করেও মিলছে না যাত্রী। বাসের যাত্রী কম হওয়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে তিনি মানুষের আর্থিক অবস্থাকে অন্যতম হিসেবে দুষছেন।

শহীদুল বলেন, ‘টেকা নাই মাইনষের হাতোত। মাইনষের যা ইনকাম তা দিয়া ঈদ করার মতো অবস্থা নাই। এটাই মনে হচ্ছে। যারা ঢাকাত আছে তাদের মনো হওচে গ্রামের বাবা মা আছে তামাক বিকাশোত টাকা পাঠায় দিল। বাড়িত আর যাওয়ার দরকার কি। একটা মাইনষের বাড়িত যাওয়ার জন্য ছয়শ থাকি সাড়ে ছয়শ টাকা লাগে। পাঁচজন হইলি পরে যাওয়া আসা ৫ হাজার টাকা লাগে। এজন্যি অনেকে যাচ্চে না।’

শহীদুল জানান, ঢাকায় ঈদের সময় তার কাছে অন্তত ২০০ জন পরিচিত জন টিকিট নেন। কিন্তু এবার একজনও তাকে ফোন করেননি। এ থেকে তিনি অনুমান করছেন এবার অর্থনৈতিক অবস্থা মানুষের খারাপ। ফলে ঢাকা থেকে গ্রামে লোকজন যাচ্ছে না।

শাহ ফতেহ আলীর কাউন্টারম্যান শহীদুল বলেন, গত শুক্রবার ভোর পাঁচটায় জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে মাত্র পাঁচজন যাত্রী নিয়ে একটি বাস ছেড়ে যায়। বাকি সব সিট খালি ছিল।

অন্যদিকে নওগাঁ থেকে তিনজন যাত্রী নিয়ে সেদিনই আরেকটি বাস ঢাকায় আসে। ভাড়া ১৫০০ টাকা হলেও শ্রমিক হওয়ায় তারা মাত্র হাজার টাকা দেন সুপারভাইজারকে। সেই টাকায় চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের খরচই তোলা কঠিন।

শহীদুলের ভাষ্যমতে, ঈদের আগে যেসব গাড়ি ফাঁকা যাচ্ছে তার সবটাই তাদের ক্ষতি। এছাড়াও তাদের কাউন্টার খরচ, রাস্তায় টোল ছাড়াও আরও নানা খাতে চাঁদা দিতে হয়। শুধু উত্তরের পথেই নয়, পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার যাত্রীরও সংকট। 

গাবতলীর বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা আগে বাস পূর্ণ করে দক্ষিণাঞ্চলে রওনা হলেও গতকাল পর্যন্ত তেমন যাত্রী পাননি তারা। তাদের ভাষ্য, পদ্মা সেতু চালুর আগে গাবতলী থেকে অনেকেই উঠতেন। কিন্তু এখন আর তারা সেটি করেন না। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের অনেকে মিরপুর থেকে সরাসরি চলে যান। আবার কেউ কেউ গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ গিয়ে সেখান থেকে বাসে যান। ফলে তারা এখন আর গাবতলী মাড়ান না।

তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি পারাপার কমেছে। ফলে যাত্রী গাবতলী থেকে আর রওনা হয় না। তারা ঢাকার বুকে বিভিন্ন ছোট ছোট কাউন্টার থেকে আগাম টিকিট সংগ্রহ করছেন।  

দেশের পোশাক কারখানাগুলো এখনো ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। যারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই পরিবারের সদস্য। চাকরীজীবীরা এখনো ছুটি না পাওয়ায় তারা যেতে পারেননি। ফলে ছুটি পাওয়ার পর ঈদযাত্রায় মানুষের ভিড় বাড়বে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। গোল্ডেন লাইন পরিবহন সাধারণত ঢাকা, ফরিদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ কুয়াকাটা রুটে যাত্রী পরিবহন করে। তারাও পড়েছেন বিপাকে। 

গাবতলীর কাউন্টার‌ম্যান মোস্তাফিজ বলেন, শুক্রবার তারা দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত যাত্রী পাননি। শনিবারও একই অবস্থা ছিল। সকাল দুটি বাস ছাড়লেও সারাদিন কোন যাত্রী পাননি। কুষ্টিয়ার কুমারখালী রুটে যাত্রী পরিবহন করে জামান পরিবহন। গাবতলীতে তাদের কয়েকটি কাউন্টার আছে। 

পরিবহনটির একটি কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সবুজ জানান, তারা শনিবার সকাল নয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কুষ্টিয়ার কুমারখালীর উদ্দেশ্যে তাদের দুটি বাস ছেড়ে গেছে। কিন্তু আসন পরিপূর্ণ করতে পারেনি। কারণ যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে দুই পাশে অন্তত ২০ টি সিট ফাঁকা রেখে গন্তব্যে রওনা হয় বাস দুটি। রাতে বাস ছাড়ার মতো তেমন যাত্রী পাননি তিনি।

গাবতলী ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রী সংকটে কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা অপেক্ষায় সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ গল্প গুজব করে সময় কাটাচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মিলছে না যাত্রী। রোববার থেকে যাত্রীর চাপ বাড়বে মনে করছেন তারা।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172, বাণিজ্যিক বিভাগ : +8802-58316175,+8801711443328, E-mail: info@jobabdihi.com , contact@jobabdihi.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft