প্রকাশ: বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৬:৫৫ অপরাহ্ন
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে মধ্যপ্রাচ্য কিংবা উন্নত দেশগুলো নীরব ভূমিকা পালন করলেও ভিন্ন পন্থায় এর প্রতিশোধ নিচ্ছে ইরানপন্থী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। সংগঠনটি প্রায়ই লোহিত সাগরে চলাচলরত ইহুদি-মার্কিন মালিকানাধীন জাহাজে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। এরমধ্যে তারা জাহাজ জিম্মিসহ বেশকয়েকটি সফল হামলাও চালিয়েছে।
সুয়েজ খাল হয়ে লোহিত সাগরে চলাচলরত জাহাজ মালিকদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে এই হুতিরা। এ অবস্থায় শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ শিপিং লাইন বহুল পরিচিত এই নৌবাণিজ্য রুট এড়িয়ে চলছে। এমনকি লোহিত সাগরবর্তী বেশ কয়েকটি বন্দরে জাহাজ না ভেড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছে তারা।
এ প্রসঙ্গে এম এস সি বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অব অপারেশন মো. আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ইউরোপে যাওয়ার জন্য সুয়েজ খাল হচ্ছে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ট্রানজিট। এখন হুতি বিদ্রোহীরা দেখা গেছে ওই ট্রানজিটকে লক্ষ্য করে আমাদের জাহাজগুলোয়ও আক্রমণ করছে।
সুয়েজ খাল এড়িয়ে বিকল্প রুট ব্যবহারের বিষয়ে জি বি এক্স লজিষ্টিক লিমিটেডের হেড অব অপারেশন মুনতাসির রুবায়েত বলেন, আমরা সুয়েজ খাল এড়িয়ে গিয়ে কেপ অব গুড হোপ দিয়ে ইউরোপে জাহাজ পাঠাচ্ছি। যার কারণে আমাদের ট্রানজিট বেড়ে যাচ্ছে।
আগে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের পণ্য নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকাগামী প্রতিটি জাহাজ সুয়েজ খাল এবং লোহিত সাগরকেই ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করত। ফলে যাত্রাপথের দূরত্ব ছিল কম। এখন তার পরিবর্তে সিঙ্গাপুর-শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসাবে ব্যবহার করে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করছে আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ রুটকে।
এরফলে যাত্রাপথের দূরত্ব অন্তত ৩ হাজার ৫০০ নটিক্যাল মাইল বেড়ে গেছে। তার সঙ্গে বাড়তি সময় লাগছে ১৪ থেকে ১৫ দিন। এতে জাহাজপ্রতি জ্বলানি খরচ বেড়েছে দেড়শো মেট্রিক টনের বেশি। এই অবস্থায় খরচ তুলে আনতে কনটেইনার পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে প্রতিটি শিপিং প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, ২ শতাধিক জাহাজ সুয়েজ খাল বয়কট করেছে। এতে ফ্রেইট চার্জ বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে গেছে। ফলে বাড়ছে রফতানি ব্যয়।
উল্লেখ্য, ১৮৭৯ সালে সুয়েজ খাল চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে এশিয়ার বাণিজ্য কেপ অব গুড হোপ দিয়েই সম্পন্ন হতো। হুতি বিদ্রোহীদের কঠোর অবস্থান ও হামলার কারণে লোহিত সাগরকে এড়াতে হওয়ায় আমদানি-রপ্তারি খরচ ৫৩ শতাংশ বাড়বে বলে মত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের। তবে লোহিত সাগরের জাহাজ চলাচলের এই জটিলতাকে সাময়িক সংকট বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল।