
রাসুলুল্লাহ (সা.) জুতা পরিধান করতেন। তিনি খোলামেলা ও স্বাস্থ্যকর জুতা পরিধান করতেন। মহানবী (সা.)-এর জুতার ধরন, তার পরিমাপ ও তা পরিধানের পদ্ধতি সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা ও সিরাত গবেষকদের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো:
১. দুই ফিতাবিশিষ্ট জুতা : মহানবী (সা.) দুই ফিতাবিশিষ্ট জুতা পরিধান করতেন। কাতাদা (রহ.) বলেন, আনাস বিন মালিক (রা.)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জুতা জোড়া কেমন ছিল? তিনি বললেন, এর দুটি করে ফিতা ছিল।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৭৭২)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর জুতা জোড়ার সামনের দিকে দুটি ফিতা ছিল। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৬১৪)
২. জুতার নকশা : সিরাত গবেষকরা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জুতার তলা চামড়ার হতো। ওপরে দুটি ফিতা লাগানো ছিল। একটি বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তার পার্শ্ব আঙুলের মাঝখানে। অন্যটি মধ্যমা আঙুল ও তার পার্শ্ববর্তী আঙুলের মাঝে। উভয় ফিতা পৃষ্ঠে হতো। এই উভয় ফিতা একসঙ্গে মিলে থাকত পায়ের পাতার মধ্যভাগে। ফিতা দুটির অপর প্রান্ত দুই পাশে গোড়ালির কাছাকাছি স্থানে লেগে থাকত। (খাসায়েলে মুস্তফা, পৃষ্ঠা ৪০)
৩. জুতার পরিমাপ : মহানবী (সা.)-এর জুতা মোবারক আধা হাত ও দুই আঙুল লম্বা ছিল। নিচ থেকে দুই ফিতার মধ্যবর্তী দূরত্ব ছিল দুই আঙুল পরিমাণ (উসওয়ায়ে রাসুল, পৃষ্ঠা-১২৬)
৪. পশমহীন চামড়ার জুতা : ঈসা বিন তাহমান (রহ.) বলেন, আনাস (রা.) দুটি পশমবিহীন পুরনো চপ্পল বের করলেন, যাতে দুটি ফিতা লাগানো ছিল। সাবিত বুনানি (রহ.) পরে আনাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, এ দুটি নবী (সা.)-এর জুতা ছিল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১০৭)
৫. গরুর চামড়ার জুতা : উবায়েদ বিন জুরাইজ (রহ.)আবদুল্লাহ বিন ওমরকে বলেন, আমি দেখেছি, আপনি সিবতাই (পশমহীন চামড়ার) জুতা পরিধান করেন! আমি দেখেছি রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন জুতা পরতেন, যাতে কোনো পশম থাকত না। তাই আমি সে রকম জুতা পরতেই পছন্দ করি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৫১)
মুহাদ্দিসরা বলেন, সিবতাই জুতা হলো গরুর পরিশোধন করা চামড়া, যাতে কোনো পশম থাকে না। (মুখতাসারুশ শামায়েল, পৃষ্ঠা-৫৪)
৬. অজুর সময় জুতা পরিধান : আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুতা পরিহিত অবস্থায় অজু করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৫১)
৭. একাধিক স্তরবিশিষ্ট জুতা : আমর বিন হুরাইস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে গরুর চামড়ার দুটি মাখসুফাহ জুতা পরিধান করতে দেখেছি। (সুনানে বাইহাকি, হাদিস : ৪৩৬০)
আল্লামা হাইতামি (রহ.) বলেন, মাখসুফা হলো এক স্তরের ওপর আরেক স্তর রাখা, যা দ্বারা বোঝা যায়, নবীজি (সা.) একাধিক স্তরবিশিষ্ট জুতা পরিধান করতেন। (আশরাফুল ওসায়েল, পৃষ্ঠা-১৪১)
৮. এক পায়ে জুতা পরা বারণ : রাসুলুল্লাহ (সা.) এক পায়ে জুতা পরে হাঁটতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, যখন তোমাদের কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, তখন সে যেন তা মেরামত না করা পর্যন্ত এক জুতা পায়ে দিয়ে না হাঁটে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৬৯)
৯. ডান পায়ে আগে জুতা পরিধান : মহানবী (সা.) প্রথমে ডান পায়ে জুতা পরতেন, পরে বাঁ পায়ে জুতা পরিধান করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্রতা অর্জনে, জুতা পরিধানে ও মাথায় চিরুনি করতে যথাসম্ভব ডান দিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪২১)
১০. বসে জুতা পরা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বসে জুতা পরিধান করতে বলেছেন, দাঁড়িয়ে পরতে নিষেধ করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে জুতা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৭৭৬)
হাদিস গবেষকরা বলেন, এই নির্দেশ সেসব জুতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যা পরতে হাতের সাহায্য প্রয়োজন হয়। এমন জুতা দাঁড়িয়ে পরলে ব্যক্তি ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে পারে অথবা পরিধেয় কাপড় নষ্ট হতে পারে।