সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১ ফাল্গুন ১৪৩১
 

অভিযান-জরিমানায় কমছে না পণ্যের দাম
প্রকাশ: সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:৫২ অপরাহ্ন

অভিযান কিংবা জরিমানা নয়, খুব সহজে পণ্যের দাম কমাতে পারে সরবরাহ। অর্থনীতির প্রাথমিক এ সূত্রের পক্ষেই রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, তেল ও চিনির বাজার। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, সিন্ডিকেট করা তো দূরের কথা - চাহিদামতো বা সরবরাহ বেশি পেলে দাম কমাতে বাধ্য তারা।

উচ্চমূল্যের বাজারে ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে চাইলে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার দিকে সরকারকে বেশি মনোযোগ দেয়ার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, 

চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যের মাধ্যমে যে দাম নির্ধারণ হবে, সেটািই হচ্ছে মার্কেট ক্লিয়ারিং প্রাইজ। আর এটিই  পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি।
 
কাজেই যোগান বাড়িয়ে পণ্যমূল্য কমানোর ক্ষেত্রে অর্থনীতির আদি এ তত্ত্ব ভোক্তার ভোগকে স্বস্তিদায়ক করতে বর্তমানে কতটা কার্যকর?

সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই চোখ পড়ে আলুর ওপর। যে আলুর দাম কমাতে সরকারি কর্মকর্তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, বৈঠকের পর বৈঠক করে, আর ঘেমে ক্লান্ত হয়ে গেছেন অভিযান চালিয়ে; অথচ বাজারে দাম তো কমেইনি; বরং আরও বেড়েছে। তাহলে এখন কমছে কীভাবে?
 
এ বিষয়ে এক পাইকারি ব্যবসায়ী বললেন, এখন যে আলু বাজারে রয়েছে, এতে মোটামুটি অনেক টাকা লোকসান হবে। বাজারে দাম প্রতিদিনই কমছে। ৬৫ কেজি আলু ২ হাজার ৯০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা।

এর আগে, ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সে সময়ে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর যৌক্তিক দাম ১৪ টাকা ১৭ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৭ টাকা ৬৩ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তবে নির্ধারিত মূল্যে কোল্ড স্টোরেজ ও খুচরা কোনো পর্যায়েই আলু বিক্রয় করা হচ্ছে না। দু-একদিন আগেও প্রতি কেজি আলুর দাম ৭০ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।
 
আলুর দাম কমার বিষয়ে আরেক পাইকারি ব্যবসায়ীর দাবি: ‘কাঁচামাল এখনো সিন্ডিকেট হয়নি। বর্তমানে সরবরাহ বেশি; কিন্তু তার বিপরীতে চাহিদা কম। তাই বাজারে দাম কমে গেছে। অভিযানের প্রয়োজন হয়নি।’
 
এদিকে, আলুর দাম নিয়ে এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে দাম একেবারে কম, তা কিন্তু নয়। বর্তমানে একটু কমেছে আর কি!’  
 
তাদের কথায় বোঝা যায়, সরবরাহ বাড়ায় দর পড়তির বাজারে কোনোভাবেই দাম ধরে রাখতে পারছে না খুচরা ব্যবসায়ীরা। লোকসান হলেও কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
  
তাছাড়া সরবরাহ সংকটে যে পণ্যের দাম বাড়ে তা আরও ভালো মতো বুঝিয়ে দিলেন পেঁয়াজের বিক্রেতারা। তারা জানালেন, চাহিদা মতো যোগান পাচ্ছেন না; তাই দাম কমতির খবরও মিলছে না। বাজারে পেঁয়াজের চড়া দাম নিয়ে এক বিক্রেতা বলেন, ‘বাজারের যে ভাব দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে না সহসাই দাম কমবে। কারণ বাজারে সরবরাহ সংকট রয়েছে। এখন তো বাজারে সব পুরনো পেঁয়াজ।’ 

সরবরাহ সংকটের অভিযোগ করে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। আমার প্রয়োজন ২০ বস্তা পেঁয়াজ কিন্তু পাচ্ছি মাত্র ৬ থেকে ৭টি।’
 
এক্ষেত্রে এক ক্রেতার ভাষ্য: দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এখন খুচরা বিক্রেতা যদি কম দামে পণ্য কিনতেই না পারেন, তাহলে তিনি আমার কাছে কম দামে পণ্য বিক্রি করবেন কীভাবে!

দেশি পেঁয়াজের সরকারি নির্ধারিত দাম হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৪ টাকা থেকে ৬৫ টাকা। যেখানে পেঁয়াজের দাম চড়েছে ১৩৬ টাকায়।
 
সরবরাহ সংকটের কারণে খুচরা বাজারে আবারও ঊর্ধ্বমুখী চিনির দাম। এ বিষয়ে এক বিক্রেতা বলেন, ‘সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। চিনির দাম প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে। যেমন- এখন এক দামে বিক্রি হচ্ছে, আবার এক ঘণ্টা পর দাম আরও বেশি। এদিকে, ছোট ছোট ডিলার বলছেন, কোম্পানি তাদের কোনো চালান দিচ্ছে না।’
 
বাজারে খোলা চিনির দাম বর্তমানে ১৩৫ টাকা কেজি। যেখানে ১৩ আগস্ট দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৩০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয় এবং যা ১৪ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়।
 
অথচ বাজারে সরবরাহ বাড়ায় আমদানি করা ভোজ্যতেল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়েও কমে। ভোজ্য তেলের দাম নিয়ে এক বিক্রেতা বলেন,
 
এখন ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাম তেল এখন প্রতি লিটার ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মূলত যখন বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি থাকে, তখন ডিলার পর্যায় থেকে আমাদের সব কিছুতেই একটু ছাড় দেয়া হয়। ফলে আমরা কম দামেও বিক্রি করতে পারি।
 
প্রসঙ্গত, ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমিয়ে যথাক্রমে ১৬৯ টাকা এবং ১৫৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এছাড়া পাম তেলের দাম ৪ টাকা কমিয়ে ১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
  
এটি তো সবারই জানা, চাহিদা-যোগান তত্ত্বের বাইরে গিয়ে অভিযান চালিয়ে এ চারটি পণ্যের কোনোটিকেই সরকার নির্ধারিত দামের মধ্যে আনতে পারেনি সরকারি কোনো সংস্থা। এমনকি ঠেকাতে পারেনি দাম বাড়ার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও। তাই ভোক্তার ভোগকে স্বস্তিদায়ক করতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন,
 
বাজারে কোনো কিছুতেই যোগান বিঘ্ন করা যাবে না। এছাড়া বাজারে যদি কোনো সংকট থাকে বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সীমান্ত খুলে দিতে হবে। এখানে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না থাকাই ভালো।
 
তাহলে দিন শেষে কী দাঁড়াল? চাহিদা-যোগানের হিসাবই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। তাই বাজারে অভিযানে এসে অনিয়ম পেলে যেমন আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, তেমনি কোন সময় কোন পণ্যের চাহিদা কেমন - সে হিসেবেই বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই কেবল পণ্য কিনে স্বস্তি পাবেন ভোক্তারা!


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  অর্থনীতি  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172, বাণিজ্যিক বিভাগ : +8802-58316175,+8801711443328, E-mail: info@jobabdihi.com , contact@jobabdihi.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft