
জ্যৈষ্ঠ মানেই ফল উৎসবের মাস, মিষ্টি ও রসালো সব ফলের মাস। আর আম ছাড়া কী এ উৎসব জমে? তাইতো একটু দেরিতে হলেও রাজশাহীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে বাহারি নাম ও জাতের সব আম। আর বাজার জমাতে প্রথমেই উঠতে শুরু করেছে জাত আম খ্যাত গোপালভোগ। নামেই যার সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে।
সাধারণত গুটিজাতের (চোষা) আম দিয়ে প্রতিবছর মৌসুম শুরু হলেও গোপালভোগ আমের জন্যই অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয় চাষি, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের। গোপালভোগ দিয়েই আমের রাজধানী রাজশাহীর আম বাণিজ্য জমে উঠে। এরপর বাজারে আসতে শুরু করে হরেক রকম নাম ও স্বাদের রসালো আম।
সব মিলিয়ে এ বছর তড়িঘড়ি করে ম্যাংগো ক্যালেন্ডারের সময় এগিয়ে নিয়ে আসায় শুরু থেকে চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে গাছ থেকে আম পাড়া নিয়ে নানা রকমের বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী আম পাড়া নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক চলে। গাছের আম পরিপক্ব না হওয়ায় তাই অনেকেই এবার ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুসরণ করছেন না। বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকেই রাজশাহীর বাজারে গোপালভোগ আম নামার কথা।
কিন্তু ১৮ মে পেরিয়ে গেলেও রাজশাহীর বাজারে এখনও সেভাবে গোপালভোগ আমের সরবরাহ বাড়েনি। গেল সপ্তাহেও বাজারে ছিল কেবল গুটি জাতের আম। তবে টক-মিষ্টি স্বাদের এ আমের চাহিদা কম। তাই বেচাকেনাতেও ছিল ঢিলেঢালা ভাব।
শুক্রবারের (১৯ মে) বাজার ধরতে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) থেকে অনেক এলাকাতেই গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়েছে। তাই শুক্রবার থেকে তার সরবরাহ আরও কিছুটা বেড়েছে। আজও নামানো হচ্ছে সুমিষ্ট স্বাদের রসালো এ আম।
আবহাওয়ার তারতম্য থাকায় সব এলাকায় একসঙ্গে গোপালভোগ আম পরিপক্ব হয়নি। তাই একযোগে সবাই এখনও বাগান থেকে গোপালভোগ আম পুরোদমে নামানো শুরু করেননি।
তবে চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় সব বাগান থেকেই রাজশাহীর জনপ্রিয় এ আম পাড়া শুরু হবে। তখন বছর ঘুরে আবারও আমময় হয়ে উঠবে রাজশাহী।
মিষ্টি-মধুর সব আমে ভরে উঠবে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও অলি-গলি। তবে সরবরাহ কম থাকলেও এখন গোপালভোগেই জমে উঠতে শুরু করেছে আমের শহর।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর। শুক্রবার সকালে বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, নানা রঙের প্লাস্টিকের ক্যারেট বোঝাই করে বিভিন্ন বাগান থেকে গোপালভোগ আম আসতে শুরু করেছে।
আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ভটভটি, নসিমন ও ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যানে করে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষি ও ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে আসছেন।
রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে ঘেঁষে আমের পসরা সাজিয়ে বসছেন। আকার ভেদে নানা রকমের দাম হাঁকছেন। তাদের হাঁকডাকে পুরো এলাকা জমতে শুরু করেছে।
আর সেই আম দিয়েই রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার পুরোনো কাচারি মাঠের ভেতর কেনাবেচা শুরু হয়েছে। গুটি ও গোপালভোগ ছাড়াও বনেদি জাতের কাঁচা-পাকা আম দিয়ে চলতি মৌসুমের আম বাণিজ্য শুরু হয়েছে।
হাট ঘুরে দেখা গেছে, এখনও গুটি আমের উপস্থিতি বেশি। তার সঙ্গে বাজারে আসতে শুরু করেছে গোপালভোগ আম।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে কথা হয় শিবপুর গ্রামের আম চাষি ফাহাদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমানে গুটি জাতের আম প্রতি মণ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও গোপালভোগ আম ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর কিছু নতুন গাছের বড় আকৃতির গোপালভোগ আম ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন বনেদি জাতের আম ১ হাজার ২০০ টাকা মণের মধ্যেই রয়েছে। এখন দাম কমার আর সুযোগ নেই। উল্টো রোজই মণপ্রতি আমের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে বাড়তে থাকবে।
বুলবুল নামে আরেক জন খুচরা আম ব্যবসায়ী বলেন, মৌসুম শুরুর দিকে গুটি জাতের আমের একটু দাম কমই থাকে। তবে গোপালভোগ আম বাজারে আসতে শুরু করলে দাম বাড়তে শুরু করে। দিন ও সপ্তাহ পেরুবে আর আমের দামও বাড়বে। এখন গুটি আম খুচরা ৩০-৪০, গোপালভোগ আম ৪০-৪৫ ও ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন বলেন, এবার রাজশাহীতে ১ হজার ৫০০ কোটি টাকার আম বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজারে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে এ বছরও ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ প্রণয়ন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট এ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গাছ থেকে আম সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তবে আবহাওয়াজনিত কারণে কোথাও আম আগে পরিপক্ব হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিতের মাধ্যমেও কৃষকরা সেই আম পাড়তে পারবেন।