প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড মণি সিংহের ১২২তম জন্মবার্ষিকী আজ।
মণি সিংহ ১৯০১ সালের ২৮ জুলাই কলকাতার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কালী কুমার সিংহের মৃত্যু হলে মা সরলা দেবী ৭ বছরের মণি সিংহকে নিয়ে ময়মনসিংহের (বর্তমানে নেত্রকোনা) সুসং দুর্গাপুরে চলে আসেন। এখানে সরলা দেবী তার ভাইদের জমিদারির অংশীদার হয়ে বসবাস শুরু করেন।
১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ কমরেড মণি সিংহ ১৯২৫ সালে প্রখ্যাত বিপ্লবী গোপেন চক্রবর্তীর সঙ্গে আলোচনার পর মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে আদর্শরুপে গ্রহণ করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ণ গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজের আদর্শকে যারা সামনে নিয়ে এসেছেন মণি সিংহ তাদের একজন।
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর থেকে প্রয় ২০ বছর তিনি আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন তিনি। কারণ পার্টির কাজ করতে যেয়ে তার ওপর নেমে আসে পাকিস্তান সরকারের দমন-নির্যাতন ও গ্রেফতারি পরোয়ানা। তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি ছিল এবং আইয়ুব সরকার তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।
১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের চাপে অন্যান্য রাজবন্দির সঙ্গে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন। ওই বছর ২৫ মার্চ পুনরায় সামরিক আইন জারি হলে তিনি জুলাই মাসে আবার গ্রেফতার হন। পরে অসহযোগ আন্দোলনের সময় অনেক নেতাকে মুক্তি দিলেও ইয়াহিয়া সরকার কমরেড মণি সিংহকে মুক্তি দেয়নি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বন্দিরা রাজশাহীর জেল ভেঙে তাকে মুক্ত করেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন-সাহায্য-সহযোগিতা আদায়ে কমরেড মণি সিংহের অবদান অবিসংবাদিত। তিনি ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনী গড়ে তুলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত দেন। তাঁকে মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নির্বাচিত করা হয়।
জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বলেন, কমরেড মণি সিংহ এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিপ্লবী ঐতিহ্যের প্রতীক। শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য এ ভূখণ্ডে যাঁরা কমিউনিস্ট আন্দোলনের গোড়পত্তন করেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। তার সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, নিষ্ঠা, সততা, সাহস, দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা কমিউনিস্ট কর্মীদের কাছে অনুসরণীয় হয়ে আছে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অকৃত্রিম দরদ-ভালোবাসা, আদর্শের প্রতি অবিচল আনুগত্য।
-জ/আ