শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭ মাঘ ১৪৩১
 

মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (সা.) যা বলেছিলেন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:৩৩ অপরাহ্ন

মাতৃভূমির প্রতি টান ও ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। জন্মভূমির প্রতি এই মমত্ববোধ মহান আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। তাই জীবন ও জীবিকার টানে মানুষ দূর দেশে চলে গেলেও নিজের জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা থেকেই যায়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-ও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না, তিনি তার মাতৃভূমিকে ভীষণ ভালোবাসতেন।

কিন্তু আল্লাহর পথে মানুষ আহ্বান করার অপরাধে মক্কার জালিমরা তাকে তার মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করেছিল।

আবদুল্লাহ ইবনে আদি ইবনে হামরাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি মক্কার একটি ক্ষুদ্র টিলার ওপর দণ্ডায়মানরত দেখলাম। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কসম! তুমি নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার সব ভূমির মধ্যে সর্বোত্তম এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তুমিই সবচেয়ে প্রিয় ভূমি। আমাকে যদি তোমার বুক থেকে (জোরপূর্বক) বিতাড়িত না করা হতো তবে আমি কখনো (তোমায় ছেড়ে) চলে যেতাম না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯২৫)


আহ! আমার প্রিয় নবীজি (সা.) কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে তার মাতৃভূমি থেকে চলে গিয়েছিলেন, তা কল্পনা করলেও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। একসময় মহান আল্লাহ তার প্রিয় নবীর মাতৃভূমি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। তাকে বিজয় দান করলেন। সেদিন মক্কার সেই জালিম অধিবাসীরা ভয়ে একেবারে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল।


ইসলামের মূলোৎপাটনে যারা নেতৃত্বভার গ্রহণ করেছিল, অশ্লীল ভাষায় মহানবী (সা.)-কে অজস্র গালাগাল করত, বিষাক্ত বর্শা হাতে তাকে হত্যা করতে ওত পেতে থাকত, তার দেহ মুবারক থেকে রক্ত ঝরাত, নামাজে নাড়িভুঁড়ি চাপা দিত, মাতৃভূমি ত্যাগ করতে যারা বাধ্য করেছিল, আজ তারা সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় দলে দলে কাবা প্রাঙ্গণে সমবেত হলো। আজ তাদের সেই দর্প, গর্ব ও আস্ফাালন নেই। ১০ হাজার মুসলিম বাহিনী দ্বারা বেষ্টিত হয়ে আজ তারা শিয়ালের মতো লেজ গুটিয়ে দুরুদুরু বুকে চেয়ে আছে দয়ার সাগর মহানবী (সা.)-এর ফায়সালার দিকে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা নগরে প্রবেশের দুটি পথ দিয়েই সৈন্য প্রবেশ করানোর সিদ্ধান্ত নেন। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে একটি বাহিনীকে মক্কার নিচু পথে নগরে প্রবেশের নির্দেশ দেন।


অবশিষ্ট বাহিনী নিয়ে স্বয়ং রাসুল (সা.) মক্কার উঁচু পথ ধরে নগরে প্রবেশ করেন। বিনা বাধায় রক্তপাতবিহীন তিনি হাজুন নামক স্থানে পৌঁছে বিজয় পতাকা উড্ডয়ন করানোর নির্দেশ দেন। তিনি সরাসরি চলে যান কাবাগৃহে। এক পর্যায়ে মহানবী (সা.) কাবাঘর থেকে বের হয়ে এলেন। তিনি দরজার উভয় পাশের কপাটে হাত রেখে এক নাতিদীর্ঘ হৃদয়গ্রাহী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রতি আজ কোনো অভিযোগ নেই। যাও! তোমরা সবাই মুক্ত।’ শুধু তা-ই নয়, কাফির নেতা আবু সুফিয়ানের গৃহে যে ব্যক্তি আশ্রয় নেবে, তাকেও তিনি ক্ষমা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে, সে নিরাপদ থাকবে।’ (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা-৪০৫, ৪০১)


বিজয় লাভ করে মহানবী (সা.) নিজ মাতৃভূমিতে প্রবেশ করছিলেন, তখন তিনি পবিত্র কোরআনের একটি বিশেষ সুরা তিলাওয়াত করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসুল (সা.)-কে (উটের পিঠে) আরোহণ অবস্থায় ‘সুরা আল ফাত‌হ’ তিলাওয়াত করতে দেখেছি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৩৪)

মক্কায় পৌঁছার পর তিনি কাবা গৃহে প্রবেশ করে মহান আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন, নামাজ পড়ে মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। (বুখারি, হাদিস : ২৯৮৮)

মক্কা বিজয়ের এই দিনটি গোটা মুসলিম উম্মাহকে অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছে। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) চাইলে সেদিন তার ওপর হওয়া প্রতিটি জুলুমের কঠিন প্রতিশোধ নিতে পারতেন। শত্রুদের আবাসস্থল নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, বরং তিনি তার শত্রুদের সাধারণ ক্ষমা করেছেন। ক্ষমা, মহান আল্লাহর শুকরিয়া ও তার প্রশংসার মাধ্যমে বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করেছিলেন।

বিজয় যেহেতু আল্লাহরই দান, তাই বিজয়ের উদযাপনও তার শোকর ও প্রশংসার মাধ্যমে হওয়া উচিত। মহান আল্লাহ সবাইকে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172, বাণিজ্যিক বিভাগ : +8802-58316175,+8801711443328, E-mail: info@jobabdihi.com , contact@jobabdihi.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft