আজ সোমবার (২৯ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রী-নেতারা বারবার বলছেন- প্রকৃত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- প্রকৃত অপরাধীদের না খুঁজে বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের দমনে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণগ্রেপ্তারের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা নেতাকর্মীদের বাসায় ছিনতাই ও লুটপাটের দৃশ্য এরই মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেন, রুহুল কবির রিজভী, নুরুল হক নুরকে নির্যাতনের পর আবারও নির্যাতন চালানোর উদ্দেশ্যে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, যা গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে। ছাত্রদল নেতা রিয়াদ ইকবাল এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভয়-ভীতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়নের সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না, তবে বিভিন্নভাবে যেসব তথ্য আসছে সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে এবং একইসঙ্গে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকদেরও বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে ও কারফিউ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রেপ্তারকৃত অনেককে ৪/৫ দিন বা এরও বেশি সময় পর আদালতে নেওয়া হচ্ছে। আটক করার পর আদালতে নেওয়ার আগে এবং রিমান্ডে থাকা অবস্থায়, এমনকি কারাগারে থাকা অবস্থায় আটককৃতদের ওপর অমানষিক ও অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থী বা নেতাকর্মীদের আটক করতে বাসাবাড়িতে অভিযানের নামে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও অশালীন আচরণ ও বাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি কার্যালয়ে তুলে এনে চাপ প্রয়োগ করে নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা যায়, কিন্তু আবেগ-অনুভূতি এবং সঙ্গীদের রক্ত মাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সবসময় তাড়া করবে, সুযোগ পেলেই তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
তিনি বলেন, এর আগেও এসব অন্যায়, অত্যাচার, আটক, নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট ও কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী ভোটারবিহীন সরকার তা কর্ণপাত করেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরকারের এসব মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানালেও সরকার তা অব্যাহত রেখেছে এবং দিনদিন তা বৃদ্ধি করছে। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনির্বাচিত ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা নিহত কিংবা আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে হয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজধানীর ৩১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতের সংখ্যা ৬ হাজারের অধিক। যেসব ছাত্র-জনতকে হতাহত করা হয়েছে তাদের পরিবারকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, সরকারের নির্দেশে মৃতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। অনেককে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে, দেশ-বিদেশের সকল নাগরিক দেখার পরও রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুকে গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে মৃত্যু বলা হচ্ছে। তবে মিথ্যাচার, অপকৌশল ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে প্রকৃত সত্যকে জনগণ থেকে আড়াল করতে পারবে না অবৈধ আওয়ামী সরকার। তাই সকল দায় নিয়ে সরকারের উচিত জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পদত্যাগ করা।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চলমান আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এর সংখ্যা অনেক বেশি। কিশোর ও আগে নিহতদের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশের দাবি জানাই। একইসঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি ও বিরোধীদলের সকল নেতাকর্মীর মুক্তি, দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।