বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও দর্শন প্রতিষ্ঠা পেলে সুষম ও সুশিক্ষার সমাজ গড়ে উঠবে: ড. মশিউর রহমান
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও দর্শনের সুষম সমাজ প্রতিষ্ঠা পেলে সুশিক্ষার সমাজও গড়ে উঠবে বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর শোষিতের গণতন্ত্র, দ্বিতীয় বিপ্লব হত্যার মধ্য দিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার যে ভিতটি বঙ্গবন্ধু রচনা করতে চেয়েছিলেন মূলত আমরা সে ভিতকে ভেঙে ফেলেছি।
এই প্রকৃত অবস্থাটি যতক্ষণ না আমরা বুঝতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত পঠন-পাঠন নানা কিছু নিয়ে কথা বলা যাবে, সেটির আবশ্যকতাও আছে। কিন্তু সমাজ কাঠামোকে যে বিভক্ত করেছি তার উত্তরণ এতো সহজ নয়। শিক্ষাকে যদি প্রকৃত অর্থেই সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য ও আদর্শনীয় করে তুলতে হয় তার জন্য সমাজ থেকে দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট দূর করতে হবে। অন্যথায় এটি খুব কঠিন হবে।
১১ জুন ২০২৪ তারিখ রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সম্মিলিত সাংবাদিক কল্যান সংস্থা আয়োজিত 'আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সুধী সমাজ ও সাংবাদিকদের ভূমিকা' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান।
দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, বাঙালির ব্যক্তির স্বশাসন নিশ্চিত করতে হলে সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন প্রয়োজন। সমতার সমাজ তৈরি হলে সমতার শিক্ষা আসবে। একটি শ্রেণিবিভক্ত সমাজে আদর্শস্থানীয় শিক্ষা গড়ে তোলা কঠিন। আমরা একটি আত্মনিয়ন্ত্রণের সুশাসনের অনন্য চমৎকার বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছি। এটি করতে গিয়ে একটি মানবিক, সৃজনশীল সমাজ করতে চেয়েছি। আমরা আজও পূজামণ্ডপে কেউ হামলা করলে সবাই মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আগামী দিনের ইতিহাস নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে পর্যালোচনা করবে বাংলাদেশ আত্মমর্যাদা সৃষ্টি করেছে এবং আত্মমর্যাদায় দারিদ্র্য বিজয় করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে একটি মানবিক বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে।
উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের মধ্যে আমার একটা জবাবদিহিতা থাকে। আমি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। সাংবাদিকতা হচ্ছে সেই মহৎ পেশা যা ব্যক্তিকে জবাবদিহিতায় বাধ্য করে এবং সমাজকে সুশৃঙ্খল করে। আজকের এই আলোচনায় শিক্ষার সংস্কার হোক। একটি মুক্ত, আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য চমৎকার শিক্ষায়, অভিনব শিক্ষায়, মানবিক শিক্ষায় বাংলাদেশ জাগ্রত হোক।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালেরয় উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্য যে স্বাধীনতা এনেছেন তার সবচেয়ে বড় জায়গা ছিল পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশের শোষণ। তারও আগে তিনি উপলব্ধি করেছেন বাঙালির মুক্তির জন্য আত্মত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রয়োজন, স্বাধীনতা প্রয়োজন। প্রতিটি ব্যক্তির স্বশাসনের মধ্য দিয়ে সমাজের যে সুশাসন নিশ্চিত হয় সেটি বঙ্গবন্ধু তাঁর বিশ্বদীক্ষায় অনুধাবন করেছেন। সেই জায়গা থেকে শিক্ষা এমন কিছু না যে তা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। সমাজের মূল ভিত্তি যখন শোষণের নিগড়ে বাঁধা হয়, যখন সমাজ কাঠামোকে গড়ে তোলা হয় নানা স্তরে। সেই জায়গায় প্রশ্ন জাগে এই সমাজ কাঠামোর মধ্যে একটি দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়েছি কিনা।
সেই কারণেই শিক্ষা বহুমুখী ও বহুধা বিভক্ত হয়ে উঠেছে। শিক্ষা বহুমুখী হতে পারে কিন্তু যখন বহুধা বিভক্ত হয় তখনই শিক্ষার্থীর মানসপটে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ও ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা গঠন হয়। পঠন-পাঠনের প্রক্রিয়া, কোন পদ্ধতিতে পড়াব তার আগে গভীরভাবে ভাবা প্রয়োজন ছিল- কোন রকমের শিক্ষায়তনের মধ্যে সবাইকে একসঙ্গে আনব।
সম্মিলিত সাংবাদিক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি জয়নুল আবেদিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুমন আহমেদের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী খান চৌধুরী মানিক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শুক্কুর আলী শুভ, দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু, ঢাকা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম, ও সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রানা হানিফ প্রমুখ।