
বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে জ্বালাও-পোড়াওয়ের সুযোগে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানসহ যানবাহনের ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গার্মেন্টস মালিকেরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ১৫ হাজার টাকার ভাড়া এখন ৩০ হাজার টাকার বেশি। একই সঙ্গে শ্রমিক পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত বাস না পাওয়ায় কারখানায় উৎপাদনও অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গত এক মাস ধরেই প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো প্রান্তে পণ্যবাহী ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যানে আগুন দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে অবরোধকারীরা ২৭৫টি গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি আরও ২৯০টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, এ সময়ের মধ্যে সংস্থাটি ১৮৫টি গাড়ির আগুন নিভিয়েছে।
এই আগুনের ঘটনার কারণে পণ্য পরিবহনে গাড়ি ভাড়া দিতে পরিবহন মালিকরা শঙ্কিত। এ অবস্থায় হাতেগোনা কিছু গাড়ি পাওয়া গেলেও তার ভাড়া অনেক বেশি। আবার আগুন সন্ত্রাস থেকে রফতানি পণ্য বাঁচাতে কৌশল হিসেবে একটির পরিবর্তে তিনটি করে গাড়ি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, আমাদের ছোট ছোট গাড়িতে পণ্য পরিবহনে বাধ্য হতে হচ্ছে। পুরো পণ্যের ক্ষতি এড়াতে আমরা একটি গাড়িতে পুরো পণ্য দিচ্ছি না। এখন আমাদের মতো রফতানিকারকদের যে যার মতো কৌশল বের বরে পণ্য রফতানি করতে হচ্ছে। যার কারণে আমাদের একটি বিশাল অংকের ক্ষতি পোহাতে হচ্ছে।
গত অক্টোবর মাসেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি করা কাঁচামাল ঢাকায় পাঠানো কিংবা সেখানকার কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রফতানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে আনার কাজে প্রতিটি কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ছিল ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা। সেই ভাড়া এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের অভ্যন্তরে ৭ হাজার টাকার ভাড়া বেড়ে ঠেকেছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, গাড়ির মালিকরা তাদের গাড়ি ভাড়া দিতে চাচ্ছেন না। কারণ যদি তাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, তারা সেই আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। অভাবের কারণে যেমন জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যায়, আমরা পণ্য পরিবহনের সেই রকম অবস্থাতেই পড়েছি। এতে আমাদের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে।
গত অর্থবছরে প্রায় ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্টস পণ্য বিদেশে রফতানি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু চলমান আন্দোলনে শ্রমিক পরিবহনকারী গাড়ি পোড়ানোতে বাড়তি টাকা দিয়েও বাস পাচ্ছেন না গার্মেন্টস মালিকেরা। ফলে কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমছে।
গত অর্থবছরে প্রায় ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্টস পণ্য বিদেশে রফতানি করা হয়েছে। গ্রাফিক চিত্র
রফতানি আয়ের পাশাপাশি আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের মূল চালিকা শক্তি হলো গার্মেন্টস শিল্প। কিন্তু হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এই শিল্প এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা সাধারণত জাহাজেই বায়ারদের কাছে পণ্য পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সংকটের কারণে যেমন শিপমেন্ট বাতিল করতে হচ্ছে, তেমনি বাড়তি খরচে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে বিমানে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলার পথে যদি এই ধরনের ব্যাঘাতগুলো আসে; পরিবহন খাতে যদি আমাদের এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়; আমাদের পণ্য পরিবহনে দেরি হয়ে যায়; এতে তো আমাদের শিপমেন্ট মিস হয়। যা আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের সমস্যা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কারখানায় আমদানি করা কাঁচামাল পৌঁছানোর পাশাপাশি রফতানি পণ্য জাহাজীকরণের জন্য প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ১২ থেকে ১৩ হাজার ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যানের চাহিদা রয়েছে।