প্রকাশ: সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২, ১১:০২ অপরাহ্ন

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ আরও কিছু এলাকায় ছড়িয়ে আছে বিহারি ক্যাম্প। সারা দেশের ১৩টি জেলায় ৭০টি ‘বিহারি’ ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ২৮টি। যার মধ্যে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প তুলনামূলক সবচেয়ে বড়।
তবে বাংলাদেশের মধ্যে বিহারিদের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি সৈয়দপুরে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব ক্যাম্পের জনগোষ্ঠীর আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে নানা বিতর্ক চললেও তার সমাধান হচ্ছে না। স্বাধীনতার প্রায় ৫১ বছর পরেও ক্যাম্প জীবন থেকে পরিত্রাণ মেলেনি তাদের। অভিযোগ রয়েছে, একটা সিন্ডিকেট নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে বিহারিদের।
অপরদিকে বিহারি ক্যাম্পগুলোকে নানা অপরাধের ঘাঁটি কিংবা মাদকের আস্তানা এবং আশপাশের এলাকার পরিবেশ নষ্টের কারণ হিসেবেও দেখা হয়। এর মধ্যে জেনেভা ক্যাম্প অন্যতম। তবে ক্যাম্পবাসীরা মনে করে তাদের ওপর মাদকের অপবাদ একতরফাভাবে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
‘বিহারিদের’ প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম সংগঠন স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানি জেনারেল রিপার্টিশন কমিটির (এসপিজিআরসি) সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী বলেন, যারা মাদকের ব্যবসা করে, মাদক সেবন করে তারাই কিন্তু আমাদের ব্যবহার করছে। আমাদের অসহায়ত্ব, আর্থিক অচ্ছলতাকে ব্যবহার করছে। দিনশেষে তারা আমাদের দুর্বলতাকে ব্যবহার করে তাদের অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। অবসর সময়ে, একটা সিন্ডিকেট তাদের ব্যবহার করছে। ধরেন, ২০০ টাকা দিয়ে বলল, এ পোটলাটা অমুক জায়গায় দিয়ে আসো। তখন সে ওই পোটলাটা নিয়ে, দিয়ে আসে। এতে অল্প পরিশ্রমেই সে ২০০ টাকা পেয়ে যায় আবার সিন্ডিকেটের কাজটাও হয়ে যায়। এদিকে দুর্নাম হয় শুধু আমার। মানুষ জানলো আমি মাদক সাপ্লাই করছি। মাদকের ব্যবসা করছি। কিন্তু মাদক বিক্রির জন্য আমাকে কে উৎসাহ দিল? কে আমাকে এগিয়ে নিয়ে গেল? এই সিন্ডিকেট!
সিন্ডিকেটের বিষয়ে সোমবার (২২ আগস্ট) ঢাকা-১৩নং (মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর আংশিক এলাকা) আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শুধু জেনেভা ক্যাম্পে নয়, পুরো মোহাম্মদপুরের আনাচে-কানাচে অনেক জায়গায় মাদকের অবস্থান আছে। তবে তার আগে জানা দরকার মাদকটা এইখানে কীভাবে আসছে? কারা আনছে এ মাদক? তারা তো আর ক্যাম্পে বসে মাদক বানায় না। বর্ডার ক্রস করে কীভাবে ঢুকছে এসব মাদক, সেসব বের করেন।
এ ছাড়া এখানে শুধু মাদক নয়, কিশোর গ্যাংয়ের বেশ ভালো উৎপাত আছে। এদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। তাই মাদক ও এসব কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের শক্ত অবস্থান নেয়ার কথা বলেন তিনি।
কিশোর গ্যাং ও মাদকের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনার ভূমিকা কী- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার কী করার আছে? আপনারা প্রশাসনের কাছে যান। কাউন্সিলরের কাছে যান। তাদের জিজ্ঞেস করেন।
এদিকে পুর্নবাসনের সঙ্গে মাদকের সম্পর্ক বিষয়ে এসপিজিআরসি সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী বলেন, অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়। আমরা অভাবে আছি। দীর্ঘ ৫১ বছর ধরে আমরা এই অভাবেই জীবন কাটাচ্ছি। কোনো কাজকর্ম নেই। কোনো স্থায়ী চাকরি নেই। বিহারি বলে আমরা কোথাও ভালো চাকরিও পাই না। কেউ কেউ সেলুনে কাজ করছে। কেউ কাপড় বিক্রি করছে। কেউবা খাবারের দোকানে কাজ করছে। আবার কেউ লেগুনা বা বাসে হেলপারি করছে। আমাদের মা-বোনেরা রাস্তায় বসে সবজি বিক্রি করছে, খাবার বিক্রি করছে। তাহলে আপনিই বলুন, তাদের ছেলেমেয়েরা কী করবে?
তিনি আরও বলেন, আমাকে যদি এই ক্যাম্পে আটকে না রাখা হতো, তাহলে হয়তো আমাদের ছেলেমেয়েরাও এসবে জড়াতো না। এইসব সিন্ডিকেটও আমাদের ব্যবহার করে মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারতো না। তাই আগে আপনারা এ সিন্ডিকেটে জড়িত কারা, তাদের খুঁজে বের করুন। তাছাড়া মাদকের বিস্তার তো শুধু জেনেভা ক্যাম্পেই নয়, সারা বাংলাদেশেই আছে। যেহেতু আমি দুর্বল তাই আমাকে হাইলাইট করা হচ্ছে।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন, আমাদের এ অমানবিক অবস্থা থেকে, এই নষ্ট হওয়া পরিবেশ থেকে বাঁচান। আজকে আমাদের পুর্নবাসন করে দেয়া হলে মাদকের এই ব্যাপকতা অনেকাংশে কমে যাবে। ক্যম্পের সঙ্গে মাদকও নির্মূল হয়ে যাবে,’ যোগ করেন এম শওকত আলী।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যেখানে শিক্ষাই নেই সেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা কী শিখবে? আমাদের কোনো খেলার মাঠ নেই, বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাচ্চারা কী করে তাদের সময় কাটাবে বলেন? ফলে তারা মাদকের দিকে ঝুঁকছে। তবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের যদি পুনর্বাসন করে দেয়া হয় তাহলে আর এসব সমস্যা থাকবে না। মাদকের অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যাবে-এমনটাই মনে করেন এম শওকত আলী।
বিহারিদের প্রতিনিধিত্বকারী এম শওকত আলীর ভাষ্যমতে পুনর্বাসন হলে মাদক নির্মূল হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সাদেক খানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অস্থির অবস্থায় আছে। এ সময় তাদের পুনর্বাসন করতে সময় লাগবে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি তাদের মানবেতর জীবন সম্পর্কে বলেছি। তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের কথাও বলেছি। তিনি করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আমরা চেষ্টা করছি পুনর্বাসনের আগে এখান থেকে মাদকটাকে নিমূর্ল করতে। তবে আপনি ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে দেখেন। তারা একটা গণ্ডির মধ্যে অনেক মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের এ দুরবস্থার সুযোগ নিচ্ছে কেউ কেউ। তারা কারা? আগে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
-জ/অ