ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা। ফসলি জমির মাটি ও বাগানের গাছ উজাড় করে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। এতে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে রোগ-বালাই। পাশাপাশি বিনষ্ট হচ্ছে সরকারি রাস্তা, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ থাকলেও রহস্যজনক কারণে নির্বিকার সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অথবা নদীতীরে পতিত দেড় একর ভূমিতে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। সরকারি সড়ক দিয়ে নয়, বরং ইটভাটার নিজস্ব রাস্তা দিয়ে চলবে মাটি বহনকারী ট্রাক্টর। সে সঙ্গে ইটভাটায় খনন করতে হবে পুকুর। অথচ বাস্তবতা এর কোনো কিছুই মানছেন না ভাটা মালিকরা। মাটি বহনের ট্রাক্টরগুলো অনেক প্রধান সড়ক গুলো দিয়েও চলাচল করে। এতে জনসাধারণসহ যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।
ঠাকুরগাঁও জেলায় গড়ে উঠেছে ১১৯ ইটের ভাটা। এদের অধিকাংশরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। লোকালয়ের আশপাশে গড়ে ওঠা এসব ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, বাড়ছে রোগ-বালাই। শুধু তাই নয়, এসব ইটভাটায় মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের কারণে ধ্বংস হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি রাস্তাঘাট গুলো। ইটের ভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহারের কারণে উর্বরতা হারাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি। এ ছাড়া ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফলে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে উজাড় করা হচ্ছে এলাকার গাছগাছালি ও বাগান।
ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়: ডিএমপি কমিশনার
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব অবৈধ ইটভাটায় মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালিত হলেও নেওয়া হচ্ছে না কঠোর ব্যবস্থা। যে কারণে থামছে না ইটভাটা কর্তৃপক্ষের আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা। নিময়নীতি মেনে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। এখানে অনেকেই নিজেদের সুবিধামতে ইটভাটা নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। এ কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। জেলা ইটভাটা সমিতির হিসাব অনুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ে মোট ইটভাটা রয়েছে ৯৮টি। বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, যেখানে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এ কাঠের জোগান দিতে গিয়ে দেদার কাটা হচ্ছে সড়ক ও বনের গাছ।
ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়: ডিএমপি কমিশনার
সরেজমিন দেখা গেছে, সদর উপজেলার গড়েয়া, রুহিয়া, জগন্নাথপুর, আকচা, মোহাম্মদপুর, রহমানপুর, ভুল্লি ও বেগুনবাড়িসহ প্রায় সব ইউনিয়নের ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদিত চিমনি নেই। একই সঙ্গে ফসলি জমিতে গড়ে তোলা বিভিন্ন ইটভাটায় ওই জমিরই মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ইটভাটার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমরা লক্ষ করেছি, জেলা সদরেই প্রায় ৫০টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটা পরিবেশের পাশাপাশি কৃষি জমির ক্ষতি করছে। এ অবস্থায় জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
ভোট ঠেকানো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়: ডিএমপি কমিশনার
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাটা মালিকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ও আবাসিক এলাকায়ও ইটভাটা স্থাপন করেছেন। এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। ফলে ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। তাছাড়া ভাটায় কাঠ সরবরাহের জন্য গড়ে উঠেছে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। তারা রাস্তার পাশের ও বনের গাছ কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন, যা জেলার সার্বিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। তাছাড়া ভাটা মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তৈরীকৃত ইটের ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন। ফলে পরিবেশের তো ক্ষতি হচ্ছেই, ইটের দামে ঠকছেন গ্রাহকরাও। দীর্ঘদিন ধরে এ অনিয়ম চললেও প্রশাসন তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আর এ সুযোগে দিন দিন গড়ে উঠছে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা।
তারা আরো বলেন, সারা দেশেই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ অভিযান চলমান রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঠাকুরগাঁও। এ জেলায় ইটভাটা মালিকরা কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের দূষণ করে ইট তৈরি ও বিক্রি করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। জেলায় ১১৯টি ইটভাটা থাকলেও পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে সর্বোচ্চ ৪৮টির। যেসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মামুন ভুইয়া বলেন, জেলায় প্রায় ১০৭/৮ ইটভাটা রয়েছে। যা প্রতি বছর ২/১টি করে বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে কিছু ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে। বেশকিছুদিন ধরে এ জেলায়ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।