প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ন
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩ উপেক্ষা করে তিন ফসলি জমিতে গণহারে দিনে ও রাতে অবাধে পুকুর খনন করা সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায়। এতে সব চেয়ে বেশী ক্ষতির মুখে পড়ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। যত্রতত্র অবৈধ পুকুর খনন করায় পানি নিষ্কাশনের ক্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে বিস্তীর্ণ মাঠের জমিতে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। বছরের পর বছর ধরে আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকছে।
এদিকে পুকুর খননকারীরা প্রভাব খাটিয়ে জমি বেদখল নিয়ে অবৈধ পুকুর খনন করছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে বর্গাচাষীদের।
নওগাঁ ইউনিয়নের সাকুয়াদিঘী গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, পংরৌহালী গ্রামের মজনু মাস্টারের ১০ শতাংশ জমি ৮০ হাজার, ১০ শতাংশ ১২০ হাজার ও ২ বিঘা জমি ২ লাখ টাকা দিয়ে বর্গাচাষ করি আমি। চলতি রবিশস্য মৌসুমে সরিষার আবাদ করেছি সবটুকো জমিতে। পুকুর খননকারীরা ফসল নষ্ট করে জোরপূর্বক পুকুর খনন করছেন আমার জমিতে। টাকাও ফেরৎ দিচ্ছেন না, জমিও বুঝে দিচ্ছেন না।
অপরদিকে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে সুনির্দিষ্ট আইন থাকার পরও দিন কী রাত, অবাধে পুকুর খনন করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকরা নিরুপায় হয়ে নিমগাছি আর্মি ক্যাম্পে জানালে তারা বুধবার রাত ৯টা থেকে ১২ টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় সব পুকুরে অভিযান চালায়। তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের সময় কয়েকজন ভেক্যু মেশিনের চালককে আটক করা হয়।
নিমগাছি আর্মি ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আকবর হোসেন দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, আমরা অবৈধ পুকুর খননকারীদের ক্যাম্পে ডেকে বুঝিয়েছি। তারা আবাদযোগ্য উর্বর জমিতে পুকুর খনন করবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়ে আসেন। কিন্তু একই অপরাধ পূনরায় করতে থাকেন। আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে ওয়াদাবদ্ধ ‘ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩ উপেক্ষা করে তাড়াশে কোনো পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না।’
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩ (২০২৩ সনের ৩৬ নং আইন) ১৩ ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে ‘ যদি কোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিরেকে আবাদযোগ্য বা কর্ষণীয় জমির উপরি-স্তর কর্তন করেন অথবা জমির রেকর্ডীয় মালিকের বিনা অনুমতিতে জমিতে বালু বা মাটি দ্বারা ভরাট করেন, তাহলে তাহার অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। এ কারণে তিনি অনধিক ২ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন। ১৯ ধারায় এই আইনের সব প্রকার অপরাধকে আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। চাইলেই বিচারপ্রার্থীরা ভূমি অপরাধ সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে এই আইনের অধীনে স্থানীয় এখতিয়ারভুক্ত থানাতেই মামলা দায়ের করতে পারবেন এবং সেক্ষেত্রে ওই থানার পুলিশ বিনা পরোয়ানায় অভিযুক্তকে আটক করতে পারবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁ ইউনিয়নের ভায়াট গ্রামে খালকুলা সড়কের মসজিদের পশ্চিম পাশে বড়-বড় কয়েকটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। খালকুলা-মহিষলুটি সড়কের পার্শে রাস্তার দক্ষিণে প্রায় অনুরূপ আয়তনের পুকুর খনন করা হচ্ছে ৩টি ভেক্যু মেশিন লাগিয়ে। মহিষলুটি-নওগাঁ সড়কের পশ্চিমে একই জায়গাতে ১টি ৫২ বিঘা ২টি ২০ বিঘা ও ১টি ১৭ বিঘা আয়তনের পুকুর খনন করা হচ্ছে। বিরৌহালী গ্রামের বিরৌহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিমে পুকুর খনন চলছে। মহিষলুটি সড়কের পশ্চিম পাশে গোয়াল গ্রামে ১৭ বিঘা পুকুর খনন হচ্ছে। তালম ইউনিয়নের তালম গ্রামের নগরপাড়া বাজার এলাকায় পুকুর খনন চলছে। মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের মাগুড়া-নাদোসৈয়দপুর সড়কের মাঝে কাটা গাঙ সেতুর সাথে পুকুর খনন করা হচ্ছে তিন ফসলি জমিতে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুইচিং মং মারমা বলেন, অবৈধ পুকুর খনন করার অপরাধে থানায় দুইটি মামলা করা হয়েছে। আরো মামলার প্রস্তুতি চলছে। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।