বাজারে আকাশছোয়া সবজির দাম। অসময়ে বৃষ্টির কারণে সবজিসহ সব ধরণের ফসল উৎপাদন পিছিয়ে এক মাস। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন সবজির চারা। সকল কৃষক যখন হতাশায় ডুবছেন। সে সময়ে নিজ উদ্যোগে পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরি করে উৎপাদন করেছেন চারা। মালচিং পদ্বতিতে চারা রোপন করে পেয়েছেন সফলতাও।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের নয়নসুখ গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা প্রায় দুই একর জমিতে সবজি চাষ করেছেন। আড়াই মাস আগে মালচিং পদ্বতিতে রোপন করেছিলেন টমেটো ও বেগুনের চারা। ইতোমধ্যে বেগুন বাজারে বিক্রি করা শুরু হয়েছে। আর সপ্তাহখানেক বাদেই টমেটো বাজারজাত করা যাবে। বাজারে সবজির দাম ভালো থাকায় বেশি লাভের আশা করছেন সবজি চাষি মোস্তফা।
শুক্রবার সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের নয়নসুখ গ্রামের পদ্মাতীরবর্তী এলাকায় মাঠে গিয়ে দেখা যায়, জমির মাঝখানে দুই পাশ থেকে কেটে মাটি কিছু পরিমান উঁচু করে জৈব সার মিশিয়ে বেড তৈরি করা হচ্ছে। এরপর মালচিং পেপার দিয়ে বেডগুলো ঢেকে দিয়ে চারা রোপন করা হচ্ছে। মালচিং পদ্বতিতে চারা রোপন করতে কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। জালের বেড়া দিয়ে ঘেরা টমেটো ও বেগুনের ক্ষেত। বাঁশের লাঠি খুঁঠি হিসেবে ব্যবহার করে টমেটো গাছ ঝুলিয়ে দিওয়া হয়েছে। ক্ষেতে থোকায় থোকায় টমেটো ও বেগুন ধরেছে। গোলাম মোস্তফা শ্রমিকদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছেন। কথা হয় তার সঙ্গে।
মোস্তফা বলেন, ‘আমি প্রতিবছরই সবজির আবাদ করি। কিন্তু অনেক সময় লোকসানে পড়তে হয়। এর আগে সব সময় প্রচলিত ব্যবস্থায় সবজি চাষ করতাম। এতে খুব একটা লাভ থাকতো না। আমি গত বছর মাগুরায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি মালচিং পদ্বতিতে সবজি চাষ করা। এরপর সিদ্ধান্ত নেই এই পদ্বতিতে এবছর সবজি আবাদ করবো। এরপর ইউটিউবে বারবার মালচিং পদ্বতিতে সবজি চাষের ভিডিও দেখি। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি। তারপর বাড়ির পাশেই পাঁচ শতাংশ জমিতে বাঁশ দিয়ে দেশীয় পলিথিন দিয়ে ঘর বানাই । তারপর ট্রেতে বেগুন, টমেটো, কাচামরিচ, লাউ ও ফুলকপি ও পাতাকপির চারা দেই। সর্বশেষ ঝড়ে সেই ঘর ভেঙে যায়। তা আবার ঠিক করে দেই। এতে আমার চারার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির কারণে যখন কেউ চারা উৎপাদন করতে পারছিল না। সে সময়ে আমার জমিতে চারা রোপন করা হয়ে গেছে। পলিথিন দিয়ে মাটি ঢাকা ছিল। একারণে বৃষ্টির পানি চারার গোড়ায় জমতে পারেনি। একারণে বৃষ্টিতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। এখন আমার আশপাশের জমিতে বেগুন-টমেটো সহ বিভিন্ন সবজির গাছ বাড়তে শুরু করেছে। অথচ আমি আর প্রায় তিন সপ্তাহ আগে থেকে বেগুন বাজার জাত করছি। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই টমেটে বাজারজাত করতে পারবো।
মোস্তফা বলেন, সাধারণ আমাদের প্রচলিত পদ্বিতে এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু মালচিং পদ্বতিতে খরচ এর প্রায় দিগুন। কিন্তু প্রচলিত পদ্বতিতে চারা রোপনের পর থেকে সব সময় যত্ন নিতে হয়। কিন্তু মালচিং পদ্বতিতে যা খরচ রোপনের সময়ই হয়। বার বার সার প্রয়োগ করতে হয় না। যা সার প্রয়োগ করা হয় তা সব সবজি গাছেই পায়। এছাড়া মালচিং পদ্বতিতে ফসলের রোগ বালাই কম। সাধারণত মাটিতে টমেটো থাকলে অনেক সবজি পঁচে যায়। এখানে তেমন কোন পচন নেই। আবার আগাম ফসল হিসেবে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। এছাড়া টমেটো শেষ হয়ে গেলে সেখানে করলা এবং শসা চাষ করবো। সে সময় আর মালচিংয়ের খরচ লাগবে না।
তিনি আরও বলেন, এখন আর নিয়ম মেনে বৃষ্টি হয় না। তাই চারা উৎপাদন করা খুবই কঠিন। আধুনিক পদ্বতিতে চারা উৎপাদন করা গেলে কৃষক যেমন তার ফসলের দাম পাবে। আবার বাজারে সবজির চাহিদা মিটবে। একটি আধুনিক সবজির চারা উৎপাদনের ঘর বানাতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লাগে। আমার এত টাকা বহন করা সম্ভব নয়। তাই সরকার যদি একটি বীজ উৎপাদনের ঘরের ব্যবস্থা করতো। তাহলে এই অঞ্চলের কৃষক উপকৃত হতো।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জনি শেখ বলেন, রাজবাড়ীতে দুই হেক্টর জমিতে মালচিং পদ্বতিতে সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। মালচিং পদ্বতিতে সবজি চাষ করলে জমিতে আগাছা কম হয়। সারের উপয্ক্তু ব্যবহার হয়। এতে যেমন ব্যয় কমে। আবার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আমরা কৃষদের পরামর্শ দিচ্ছি মালচিং পদ্বতিতে চাষাবাদ বাড়াতে। মালচিং পদ্বতিতে চাষাবাদ বাড়লে একদিকে যেমন কৃষক লাভবান হবে, অন্যদিকে দেশে সবজির উৎপাদন বাড়বে।