প্রকাশ: শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৭:২৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৭:২৬ অপরাহ্ন

২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের। ছয় বছর আগে ৩-০ গোলে হারের তিক্ত স্বাদ মিললেও এবার ভিন্ন কিছুই উপহারের আশা দেখিয়েছিলেন বাঘিনীদের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। মাঠে সেটি প্রমাণ করেছে তার দল। ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরকে ৩-০ গোলে হারিয়ে যেন মধুর প্রতিশোধই নিলো লাল-সবুজের দল।
আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৪ মাস পর জয় পেলেন সাবিনারা, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের পর আবারও দলটি জয়ের স্বাদ পেল।
শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুক্রবার ম্যাচের শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করে রাখে স্বাগতিক দল। পাসিং ফুটবলের ছন্দের সাথে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২ ধাপ উপরে থাকা দলটির বিপক্ষে দেখিয়েছে দাপট।
দ্বিতীয় মিনিটে থ্রো ইন থেকে বল পেয়ে প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যান তহুরা খাতুন। কিক নিতে খানিকটা দেরি করায় সিঙ্গাপুরের এক ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করায় সুযোগ হাতছাড়া হয়।
তৃতীয় মিনিটে বাঘিনীরা আর ভুল করেননি। এগিয়ে গিয়ে স্বাগতিক দর্শকদের উদযাপনের উপলক্ষ এনে দেন। সাবিনা খাতুন নিয়েছিলেন শর্ট কর্নার। মারিয়া মান্দা বল রিসিভ করে আবারও সাবিনার পায়ে ঠেলে দেন। টিম টাইগ্রেসের অধিনায়ক শট নেন। ডি-বক্সের ভেতর থাকা ডিফেন্ডার আফিদা খন্দকার উড়ন্ত বলে মাথা ছুঁইয়ে সেটি গোললাইন অতিক্রম করান।
ম্যাচের ১৫ মিনিটে আবারও এসেছিল দারুণ সুযোগ। সাবিনার পাসে বল পেয়েছিলেন শামসুন্নাহার সিনিয়র। তার থেকে তহুরা খাতুন বল নিয়ে অনেকটা দৌড়ে বক্সে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশি ফরোয়ার্ডের ক্রসের সময় গোলমুখে কেউ ছিলেন না। ডানপ্রান্তে থাকা সাবিনা পরে পাস দিলেও জায়গামতো আসতে পারেননি মারিয়া।
ব্যবধান দ্বিগুণে বাংলাদেশ বিলম্বও করেনি। সাবিনার পাসে মারিয়া চমৎকার দক্ষতায় অতিথি দলের তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে যান। তার সামনে থাকা তহুরাকে ছেড়ে দেন বল। ডান পায়ের টোকায় বল জালে জড়াতে তহুরা ভুল করেননি। কমলাপুরে ১৬ মিনিটের সময় দেখা যায় কলসিন্দুরের দুই ফুটবলারের ডুয়েল ম্যাজিক।
বক্সের বাইরে থেকে সাবিনার ডানপায়ের দূরপাল্লার শট ২৫ মিনিটে পোস্ট ঘেঁষে উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। বল দখলের লড়াইয়ের সময় হেড করতে গিয়ে সামান্য আঘাত পান মারিয়া। ৩০ মিনিটের মাথায় সিঙ্গাপুরের ফরোয়ার্ড ফারাহর সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ায় দুজনই আহত হলে রেফারি খেলা বন্ধ রাখেন। মারিয়া মাঠের বাইরে গেলেও খেলায় ফিরতে সময় নেননি। ফারাহর চোট তুলনামূলক গুরুতর ছিল। তিনিও পরে মাঠে ফেরেন।
খেলার ৩৫ মিনিটে বাঁ-পায়ের দূরপাল্লার শটে মারিয়াও গোলের চেষ্টা করেছিলেন। প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক তান লি বল গ্লাভসবন্দি করেন। বিরতির পর ৬০ মিনিটে বল জালে জড়ান তহুরা। মাঝ মাঠ থেকে মাসুরা পারভীনের লম্বা পাসে বল নেন টাইগ্রেস ফরোয়ার্ড। গোলরক্ষক এগিয়ে আসার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডান পায়ের ভলিতে দারুণ ফিনিশিংয়ে তহুরা নিজের জোড়া গোলের দেখা পান।
মিনিট পাঁচেক পর মণিকার কর্নার কিকে নিজেদের জালেই বল জড়াচ্ছিলেন নূর সারাহ। তৎপর থাকায় বল ধরে ফেলেন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক তান লি। মারিয়া ম্যাচের ৭৭ মিনিটে সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। বাঁ-প্রান্ত থেকে আক্রমণে ওঠা সাবিনা সতীর্থ তহুরার সঙ্গে বল দেয়া-নেয়া করে দেন পাস। গোলরক্ষককে একা পেয়েও ঠিকঠাক শট নিতে না পারায় বল পোস্টের পাশ দিয়ে চলে যায়।
কয়েক সেকেন্ড পর সাবিনার পাসে বল পাওয়া ঋতুপর্ণা চাকমার কিক প্রতিহত করেন তান লি। এসময় সানজিদার পরিবর্তে নামেন শাহেদা আক্তার রিপা। একইসঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র মাঠে নামায় বেঞ্চে বসেন ঋতুপর্ণা। ৮৩ মিনিটে বক্সের সামান্য বাইরে তহুরা ফাউলের শিকার হন। সাবিনার নেয়া ফ্রি-কিকে বল বারে লেগে ফিরে আসে।
তহুরার জায়গায় ৮৬ মিনিটে নামেন মাতসুশিমা সুমাইয়া। মিডফিল্ডার মণিকার স্থানে আসেন স্বপ্না রানি। অধিনায়ক সাবিনা বেঞ্চে বসলে আকলিমা খাতুন খেলতে নামেন। বাকি সময়ে অনেক চেষ্টা করেও আর জালের দেখা পাওয়া হয়নি। তিন গোলের জয়ে মাঠ ছাড়ে সাইফুল বারী টিটুর দল।