বরিশালের বিএম কলেজ সংলগ্ন সড়কে একটি দ্রুতগতির অটোর ধাক্কায় জান্নাতুল মাওয়া (১০) নামে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর একটার পর থেকেই বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
নিহত জান্নাত পটুয়াখালী সদর উপজেলার বাসিন্দা। তার বাবা মো. নিজাম। তারা বরিশালের বিএম কলেজ রোড এলাকায় বেড়াতে এসেছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জান্নাত ও তার এক সহপাঠী দোকান থেকে চিপস কিনে রাস্তা পার হচ্ছিল। এসময় দ্রুতগতির একটি হলুদ অটো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জান্নাতকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই চালক পালিয়ে যায়।
দুপুর একটার পর থেকে শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে এবং প্রতিবাদ স্বরূপ রাস্তায় ক্রিকেট খেলেন। এতে করে স্থানীয় ও দূরবর্তী যাত্রীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হয়।
বরিশাল বিএম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, অরক্ষিত সড়ক এবং বেপরোয়া চালকদের কারণে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। নিরাপদ সড়ক চাই। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলন চলবে।
বিক্ষোভকারীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বেশ কয়েকটি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো-
১. চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে অটোচালককে গ্রেফতার এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. কলেজের সামনের ফুটপাতগুলো স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত করতে হবে।
৩. কলেজ চলাকালীন সময়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. নথুল্লাবাদ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত গতিসীমা নির্ধারণ করতে হবে।
৫. স্পিডব্রেকার ও ডিভাইডার নিশ্চিত করতে হবে।
৬. কলেজের সামনে স্থায়ীভাবে ট্রাফিক পুলিশ বক্স নির্মাণ করতে হবে।
৭. রাস্তা ও ক্যাম্পাসকে ১০০ শতাংশ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।
সরকারি বিএম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতিদিন পথচারীরা ঝুঁকিতে থাকছেন। আজকের এই মৃত্যু আবারও আমাদের কাঁপিয়ে দিল। প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ চাই।
সরকারি বিএম কলেজেরন অর্থনীতি বিভাগের কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাস ও রাস্তাকে নিরাপদ করতে নিয়মিত মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়তে হবে।’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিশুটির মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর আমরা অটোটি জব্দ করেছি এবং চালককে গ্রেফতার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানাই এবং সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
এ মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের দাবি, নিরাপদ সড়কের স্বার্থে প্রশাসন দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেবে।