বকেয়া বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও কমিয়ে দিয়েছে আদানি পাওয়ার। ভারতীয় কোম্পানিটি বর্তমানে এই সরবরাহের পরিমাণ ৪০ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে।
আজ শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন মতে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় আদানি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর পর থেকে দুটি প্লান্টে উৎপাদিত ১৪০০-১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সবটুকুই সরবরাহ করা হতো বাংলাদেশের জন্য। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে একটি প্লান্ট বন্ধ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৭০০-৭৫০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা হয়।
পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের উপাত্ত এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তার বরাতে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) এই বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ আরও একধাপ কমিয়ে ৫২০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা হয়েছে।
আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৫ সালে কোম্পানিটির সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদে একটি চুক্তি করে শেখ হাসিনা সরকার। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় আদানি পাওয়ারের দুটি ইউনিট রয়েছে। যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৮০০ মেগাওয়াট করে। এই দুটি ইউনিটের পুরো বিদ্যুৎ অর্থাৎ ১৬০০ মেগাওয়াটের বেশিরভাগই বাংলাদেশে রপ্তানি করে আদানি, যা বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করে।
তবে সম্প্রতি সেই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। কয়লার চড়া দাম দিতে অস্বীকৃতি জানায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
এরপর দাম কমাতে রাজি হয় আদানি। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কম দামে কয়লা সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও দেয় তারা। তবে, এক বছর পর এখন আবারও বাড়তি দাম চাইছে আদানি।
জানা গেছে, গত জুলাই থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম পায়রার তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি ধরে বিল করছে আদানি। আবার বকেয়া বিলের ওপর ১৫ শতাংশ হারে সুদ ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি বকেয়া বিল পরিশোধে বাংলাদেশকে নিয়মিত চাপ দিচ্ছে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে আদানি।
এরপর বকেয়া পরিশোধে নতুন করে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় আদানি কর্তৃপক্ষ। তা না হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে কোম্পানিটি। এবার সে মোতাবেক বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও এক ধাপ কমালো তারা।
কয়লার বাড়তি দর ও বকেয়া বিলের সুদ ধরে আদানির হিসাবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে পাওনা জমেছে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে পিডিবি বলছে, আদানির বকেয়া বিলের পরিমাণ ৭০০ মিলিয়ন ডলার বা আট হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
এদিকে বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পরিমাণ নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও আস্তে আস্তে বিল পরিশোধ করছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) প্রকাশিত ইকোনমিক টাইমসের পৃথক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আদানি পাওয়ারকে আরও ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার (২ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে ঋণপত্র খুলেছে পিডিবি।
অজ্ঞাত একটি সূত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এটা পিডিবির পক্ষ থেকে আদানি পাওয়ারকে দেওয়া তৃতীয় এলসি। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ভারতের আইসিআইসিআই ব্যাংকে এই এলসি খোলা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে বকেয়া পরিশোধ করছি এবং কেউ যদি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা নেব। আমরা কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীকে আমাদের জিম্মি করতে দেব না।’