প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪, ৭:২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪, ৭:২৬ অপরাহ্ন
গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রের পানি গত ২৪ ঘন্টায় ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে(আজ সকাল ৯টায়) বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। এসময় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯২ মিলিমিটার। এছাড়াও ঘাঘট ও তিস্তা নদীতেও পানি বাড়ছে। গাইবান্ধা জেলার ৪টি উপজেলায় ২৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫টি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৯টি, সাঘাটা উপজেলায় ৫টি ও ফুলছড়ি উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন। নতুন করে পানি বৃদ্ধির কারনে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাইরে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৬৫টি চরের লক্ষাধিক মানুষ ১০দিন ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে।
বন্যায় কাদা-পানিতে বন্যার্তরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। দুর্গত এলাকায় খাদ্য সংকটের পাশাপাশি মানুষের দেখা দিয়েছে চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানা রোগ। ঘরে পানি থাকায় গবাদি পশু নিয়ে উচুঁ ঢিবিতে মানুষগুলো গাদাগাদি করে বসবাস করছে। গো-খাদ্যের অভাবে চরাঞ্চলের মানুষের প্রধান অর্থকরী সম্পদ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বন্যায় ১৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পানি বন্দি পরিবারের সংখ্যা ৩৬ হাজার ২০৭টি টা। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদরে ১০ হাজার ৫৮৭টি, সুন্দরগঞ্জে ৫ হাজার ৫০০টি, সাঘাটায় ১২ হাজার ৬৩০টি ও ফুলছড়িতে ৭ হাজার ৪৯০টি। এছাড়া বন্যার্তদের জন্য ১৮১ টি স্থায়ী অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ৩ হাজার ২৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৩৮৫ মেট্রিক টন জি আর চাল ও জিআর ক্যাশ ১৫ লাখ টাকা ৪ উপজেলায় উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পীড বোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা এবং উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়ন ভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম এবং লাইভস্টোক টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রচার প্রচারণা চলমান রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে পানির জেরিকেন এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হচ্ছে।
জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৭৭১ পরিবারকে বন্যা পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পরিবার প্রতি ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ কোটি টাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। ১০টি ক্লাস্টারভিলেজ, ৩টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও জিইউকের পরিচালিত ৬টি স্কুলে অন্ততপক্ষে ৫ শতাধিক বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। উদ্ধার নৌকার মাধ্যমে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক পরিবারের ৩০০ নারী-পুরুষ, শিশু পাবিবন্ধী ও বৃদ্ধসহ তাদের সহায়সম্পদ নিরাপদে পৌছি দেয়া হয়েছে। সদর উপজেলার কামারজানি উইনিয়নের কুনদেরপাড়া গণউন্নয়ন কেন্দ্র বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও বিভিন্ন বাধে ২০ ল্যাট্রিন সেট ও ২টি নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে টিনসেট স্থাপন করে শতাধিক পরিবারের অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া গবাদি পশুর জন্য পলিথিন সিট দেয়া হয়েছে ১ হাজার ফুট।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউএনএফপিই এর সহায়তা ২ হাজার ৪০০ নারীর মাঝে ১৬ ধরণের উপকরণ সামগ্রী মর্যাদা সুরক্ষা কিট ও প্রত্যেককে ৯০০ টাকা করে যাতায়াতভাতা প্রদান করা করেছে। এছাড়াও জেলায় ৯০৮ জনকে ৪ হাজার ৩০০টাকা করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধমে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ৫০ জন হিজড়াকে ৪ হাজার ৩০০ টাকা করে নগদ প্রদান করা হয়েছে।