বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ৮ কার্তিক ১৪৩১
 

দেশের অধিকাংশ জায়গায় টানা বৃষ্টি হতে পারে    ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল সরকার    রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আলোচনা হচ্ছে: তথ্য উপদেষ্টা    ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ৭ জনের, হাসপাতালে ১,১৩৮    ৪৭তম বিসিএসে ৩৪৬০ শূন্যপদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য আবেদন    চলতি অর্থবছরে জিডিপি কমার পূর্বাভাস আইএমএফের    সচিবালয়ে ঢুকে পড়া ৫৩ শিক্ষার্থী আটক    
রেগুলেটরি কাঠামো দুর্বল হওয়ায় স্থিতিশীল নয় শেয়ারবাজার
মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান:
প্রকাশ: রোববার, ২ জুন, ২০২৪, ৪:৫৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: রোববার, ২ জুন, ২০২৪, ৫:১৬ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ারবাজারের  সংকট উত্তরন ও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে কথা বলেন। সম্প্রতি  দৈনিক জবাবদিহির সঙ্গে আলাপচারিতার চম্বুকাংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো। মুখোমুখি আলাপের তথ্য সংগ্রহ করেছেন প্রতিনিধি মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান।

এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিনও আমরা শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে আনতে পারিনি। আমাদের মার্কেট অনেক ছোট। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যাও অনেক কম। এক্সচেঞ্জে যে সমস্ত অ্যাসেট ট্রেড হচ্ছে, সেখানে তেমন কোনো বৈচিত্র নেই। শেয়ারবাজারের পিছনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ২০০০ সালের আগে এবং ২০১০ সালের পরে বড় বড় দুটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। শক্তিশালি রেগুলেটরি স্ট্র্যাকচার না থাকার কারণে এধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। 

তিনি বলেন, আমরা এখনো শেয়ারবাজারের জন্য টেকসই রেগুলেটরি স্ট্রাকচার দাঁড় করাতে পারিনি। আমাদের শেয়ারবাজার আইসোলেটেড অবস্থায় রয়েছে। আমাদের দেশের অবকাঠামোগত যে পরিমান ডেভেলপমেন্ট হয়েছে, অর্থনীতি যেভাবে ডেভেলপ হয়েছে, শেয়ারবাজার সেভাবে হয়নি। এর মূল কারণ হচ্ছে, নীতি নির্ধারকরা শেয়ারবাজারকে কোয়ালিটেটিভ এক্সপানসন করতে পারেননি। শেয়ারবাজার এখনো বিচ্ছিন্নভাবে চলছে।

সিএসই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, শেয়ারবাজারে যখন সংকট দেখা দিয়েছে, তখন তার সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। যে কারণে শেয়ারবাজারের আজ এই দৈন্যদশা। মূলত শেয়ারবাজার দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেবে। আর ব্যাংকিং খাত দেবে স্বল্প মেয়াদি বা মধ্যম মেয়াদি অর্থনৈতিক সাপোর্ট। কিন্তু এখানে ব্যাংকিং খাতকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিতে হচ্ছে, দিতে হচ্ছে স্বল্প মেয়াদি ও মধ্যম মেয়াদি সাপোর্টও। যার কারণে ব্যাংকিং খাতে অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়েছে। এদিকে শেয়ারবাজার নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ফাইন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সাপোর্ট কম দিচ্ছে। ফলে শেয়ারবাজারো এগোতে পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা যদি ব্যাংকের সঙ্গে শেয়ারবাজারকে ব্যালেন্স করে এগিয়ে নিতে পারতাম, দীর্ঘমেয়াদি ফাইন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে যদি শেয়ারবাজার থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ নিতে পারতাম, তাহলে ব্যাংকিং খাতে এতো সমস্যা দেখা দিতো না। আমরা এতো দিনেও কর্পোরেট ফাইন্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে কাঠামোগত সংকট বা রেগুলেটরি দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমাদের শেয়ারবাজারে যে ধরনের অ্যাসেট ক্লাস, বৈচিত্র, স্বচ্ছ রেগুলেটরি কাঠামো দরকার, সে ধরনের কাঠামো আমরা তৈরি করতে পারিনি। বর্তমান শেয়ারবাজার ইক্যুইটি মার্কেট নির্ভর। ইক্যুইটি মার্কেটকে শক্তিশালি করতে মানসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিতে পাচ্ছে না শেয়ারবাজার। নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে ডাইমেনশন না থাকার কারণে ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। যদি তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে না পারি, বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়াতে না পারি, বাজার মধ্যস্থতাকারীর সংখ্যা বাড়াতে না পারি, স্বচ্ছ রেগুলেটরি কাঠামো না দিতে পারি, তবে বাজার বড় হবে না।

সাইফুর রহমান বলেন, আশার কথা হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজার নিয়ে একটিভলি চিন্তা করছে। পাবলিক ইস্যু রুলসকে যুগোপযোগী করা, রেগুলেটরি কাঠামোকে স্বচ্ছ করা, আইটি বেসড কোম্পানিকে সুযোগ দেয়া একান্ত জরুরী। রাষ্ট্রিয়ভাবে শেয়ারবাজারের গুণগত সম্প্রসারণের জন্য যে সমস্ত পলিসি দরকার, সেটা যদি নিশ্চিত করা হয়, তাহলে শেয়ারবাজারের সংকট কেটে যাবে। 

মার্চেন্ট ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বিনিয়োগকারী, বিএসইসি, এক্সচেঞ্জসহ শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সকলকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যারা মার্কেটের কাঠামো দিচ্ছেন, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেটা নিশ্চিত করা। সেই নিশ্চিত যদি আমরা করতে না পারি, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।

সিএসই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, করোনা মহামারিতে বিশ্ব তালমাতাল হয়েছিল, আমাদের পরিস্থিতিও ভালো ছিল না। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশের যুদ্ধ চলমান রয়েছে। যে কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে ডলার মূল্যের অস্থিরতা, ডলারের রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি, এক্সপোর্ট আর্নিং, এসমস্ত জায়গায় গত কয়েক বছরে সংকট তৈরি হয়েছে। যেটা আগে আমরা দেখিনি। এসমস্ত সমস্যার আগে আমাদের জিডিপি সাড়ে ৬ শতাংশ করে হচ্ছিল।

বিএসইসি’র পুনর্গঠন নিয়ে তিনি বলেন, বিএসইসিতে একজন নতুন কমিশনার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। তারা সবাই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তারা যদি কাজ করার সুযোগ পান, তবে শেয়ারবাজার আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। তবে এককভাবে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কমিশন, এক্সচেঞ্জসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে নিয়েই বাজারের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দায়িত্বে থাকাকালিন বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি ডিএসইতে কাজ করেছি প্রায় চার বছর। এর বেশিরভাগ সময় আমি চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করেছি। শেষের প্রায় ১৩ মাস আমি ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ছিলাম। আমি সে সময় স্মল ক্যাপ বোর্ড, অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি), ডেট বোর্ড তৈরি করেছি। টেকনোলজিক্যাল কাঠামো তৈরি করেছি। এজন্য বিজনেস রুলস স্পেসিফিকেশন তৈরি করতে হয়েছে। বিজনেস রুলস তৈরি করতে হয় রেগুলেটরি কাঠামোর উপর। এ কাজ গুলো আমি দায়িত্বে থাকাকালিন শুরু হয়েছে এবং শেষ হয়েছে। সরকারি সিকিউরিটিজকে আমরা ট্রেডেবল করেছি। আমি ডিএসইতে দায়িত্ব নেয়ার আগে যে এডমিনিস্ট্রেটিভ কেওয়াজ ছিল। আমার নেতৃত্বে সেই কেওয়াজ দূর হয়েছে।

সাইফুর রহমান বলেন, আগামী ছয়/সাত মাসের মধ্যে সিএসই একটা কমোডিটি ডেরিভেটিভ এক্সচেঞ্জ পাবে। সিএসই ইক্যুইটি ডেরিভেটিভস নিয়েও কাজ করছে। কমোডিটি ডেরিভেটিস যখন আসবে, তখন একই টেকনোলজি দিয়ে ইক্যুইটি ডেরিভেটিভসের কাজও হবে। সিএসই’র কাঠামো কিছুটা ছোট। কারণ ডিএসইতে ব্রোকারেজ হাউজ, তালিকাভুক্ত কোম্পানি অনেক বেশি সিএসই’র তুলনায়। সিএসইতে অল্প সংখ্যক ব্রোকারেজ হাউজ রয়েছে। যে কারণে সিএসই’র টেকনোলজিতে একধরনের তারল্য সংকট সারা বছরেই থাকে। সেই তারল্য সংকট দুর করার জন্য ডিএসই’র এরিয়ার বাহিরে গিয়ে আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


Also News   Subject:  অর্থনীতি   শেয়ারবাজার   চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আক্তার হোসেন রিন্টু
বার্তা ও বাণিজ্যিক বিভাগ : প্রকাশক কর্তৃক ৮২, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক (৩য় তলা) ওয়্যারলেস মোড়, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭।
বার্তা বিভাগ : +8802-58316172. বাণিজ্যিক বিভাগ : +8801868-173008, E-mail: dailyjobabdihi@gmail.com
কপিরাইট © দৈনিক জবাবদিহি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft